উত্তম কুমার দাশ

২০ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:৩৪

অধিকার বঞ্চিত শিশুদের পাঠশালা ‘ইচ্ছেপাঠ’

তখন শীতকাল। তারা বন্ধুরা মিলে প্রায়ই আড্ডা দিতে যেত সিলেট নগরীর কাজির বাজার ব্রিজে। অদ্বিতী, অর্ণব ,ঐশী ,পার্থ সারথী, পূজা, লাবণ্যসহ আরো অনেকেই ছিল তাদের দলে।

এই ব্রিজের পাশেই প্রতিদিন ঘুরোঘুরি করতো কয়েকটা শিশু। যাকে সামনে পেতো পা আকড়ে ধরে ভিক্ষা চাইত, কেউ ইচ্ছে হলে কিছু টাকা দিত, আবার কেউ কেউ করে তাড়িয়ে দিত।  এই দৃশ্যগুলো প্রতিদিই চোখে পড়তো এই বন্ধুদলের। ব্যাথিত করতো তাদের।

তখনই তাদের মাথায় আসে এই বাচ্চাগুলোর জন্য কিছু করার। প্রথম অবস্থায় এদের জন্য শীতবস্ত্র জোগাড়ের চেষ্টা চালায় সবাই।  পরিচিত লোকজন,বন্ধুবান্ধবসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরাতন পরিধানযোগ্য কাপড় সংগ্রহ করা হয়। কাপড় বিতরনের মধ্য দিয়ে এই শিশুদের সাথে তাদের সখ্যতা গড়ে উঠে।

শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি,  অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া এইসব কিছুর সমাধান কিভাবে করা যায় এই নিয়ে তারা ভাবতে থাকে।  তাদের কাছে শিক্ষাই একমাত্র সমাধান বলে মনে হয়।

এই চিন্তা থেকে এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এই বন্ধুরা মিলে গড়ে তুলে "ইচ্ছেপাঠ"।  "ইচ্ছেপাঠ" অধিকার বঞ্চিত শিশুদের পাঠশালা।  বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রায় ২২জন শিক্ষার্থী পরিচালনা করছেন এই পাঠশালা।  প্রথম অবস্থায় ত্রিশজন হতদরিদ্র শিশুকে নিয়েই শিক্ষাদান কার্যক্রম শুরু হয়।  

বিনামূল্যে শিক্ষাদান এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণসহ আনুসাঙ্গিক সকল উপকরণ নিজেদের ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে সংগ্রহ করার মাধ্যমে এই স্কুলের কার্যক্রম চালানো হয়।

শুরুর দিকে সপ্তাহে দুইদিন পাঠদান চলতো।  শিশুদের সংখ্যা ত্রিশজন থেকে বেড়ে পঞ্চাশে আসে। এখন সপ্তাহে তিন দিন পাঠদান চলে।  পড়াশুনার পাশাপাশি গান, কবিতা, চিত্রাংকন এবং খেলাধূলারও ব্যাবস্থা রয়েছে এখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য।



সিলেট নগরীর শেখঘাট এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে ইচ্ছেপাঠের পাঠদান কার্যক্রম।  নিজস্ব পাঠদানের জায়গা হলে পাঠদানে অনেক সুবিধা হত বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ইচ্ছেপাঠের ২২জন সদস্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন এই অধিকারবঞ্চিত শিশুদের জন্য।  নিজেদের হাতখরচ কমিয়ে সেই টাকা অধিকার বঞ্চিত শিশুদের জন্য ব্যয় করছেন।

উদ্যোক্তারা জানান, দেশ ও দেশের বাইরে থেকেও বেশ কয়েকজন স্বহৃদয়বান ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে সাহায্য করে যাচ্ছেন।

ইচ্ছেপাঠের অন্যতন সংগঠক সপ্তর্ষি দাস বলেন,  আমাদের দেশের হাজার হাজার পথশিশু শিক্ষাবঞ্চিত অথচ শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার।  আমরা সমাজের সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমাজ বদলে দিতে চাই।  একটি পথশিশুও যেনো শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয় এই মূল্যবোধ থেকে ইচ্ছেপাঠ কাজ করে যাচ্ছে।  

ইচ্ছেপাঠ এর আরেক সংগঠক পার্থ সারথী তালুকদার বলেন, আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই, ইচ্ছেপাঠ আমাদের এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়।  আমরা সমাজকে বদলে দিতে চাই সমাজকে নতুন করে গড়তে চাই।

 ইচ্ছেপাঠ-এর বাকি সদস্যরাও স্বপ্ন দেখেন সমাজ বদলের।



অদ্বিতী ইচ্ছেপাঠকে ছড়িয়ে দিতে চায় প্রতিটি শহরে প্রতিটি এলাকায়। বাংলাদেশে শিক্ষাবঞ্চিতদের হার কিছুটা হলেও কমাতে পারাকে স্বার্থকতা মনে করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত