দেবব্রত চৌধুরী লিটন

১৪ জুন, ২০১৬ ১৮:২৪

শাহজালাল মাজারের গণ ইফতার : প্রতিদিন শরিক হন কয়েক শ’ রোজাদার

'আসেন আসেন ইস্তারী করেন আইসা'। সোমবার ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে হযরত শাহ্‌জালাল (র.) মাজারের এবাদতখানার সামনে আঞ্জু মিয়া, বুরহান মিয়াসহ মাজারের ৪/৫ জন কর্মী মাজার জিয়ারত করতে আসা মানুষদের ডাক দিচ্ছিলেন এভাবেই।

ডাক শুনে এগিয়ে আসেন অনেকেই। মাজারের কর্মীদের কাছ থেকে ইফতারের টিকেট নিয়ে কলাপসিবল গেইট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকেন সবাই। দুইতলা এ এবাদতখানার নিচতলায় নারীদের আর উপরের তলায় পুরুষদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে।

এবাদত খানার ২য় তলায় পুরুষ ভক্তদের হাতে টিকেট দেওয়ার সময় কথা হয় মাজারের কর্মী জামাল উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, রমজান মাসে শাহজালাল (র.) মাজারে আসা ভক্ত ও দরিদ্রদের জন্য অনেক দিন থেকেই ইফতার করানোর প্রথা চলছে। ৭/৮ বছর থেকে মাজারের মোতাওয়াল্লিদের ব্যবস্থাপনায় আয়োজন করা হয় ইফতারের। প্রতিদিনই শ'তিনেক লোক এখানে ইফতারে অংশ নেন। তবে বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা দ্বিগুণ দাঁড়ায়।

ইফতারের সময় এবাদতখানায় ঢুকলে দেখা যায় সারিবদ্ধ হয়ে বসে ইফতার করছেন রোজাদাররা। সামনে প্লাস্টিকের থালায় খিচুরি, খেজুর, ছোলা-পিয়াজু ও জিলাপি। যারা ভিতরে জায়গা পাননি তাদের জন্যেও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পলিথিনের ব্যাগের মধ্যে তাদের ইফতার সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।

শাহজালাল (র.) মাজারে প্রতিদিন ইফতারে অংশ নেওয়াদের মধ্যে বেশিরভাগ ভিক্ষুক, পথশিশু ও ছিন্নমূল জনগোষ্ঠির। এছাড়া মাজারে বেড়াতে আসা ভক্তরাও অনেক সময় যোগ দেন এই গণইফতারে। ইফতারের সময় নানা অঞ্চলের মানুষের মিলনামেলা ঘটে মাজার প্রাঙ্গনে।

ইফতারের সময় কথা হয় শাহ আনিসুল্লাহ নামের ভক্তের সাথে। তিনি বলেন, মানুষ নেকি পাওয়ার জন্য মাজারে ইফতার দেন। আমিও আজ প্রথমবার ইফতার করতে এসেছি বেশিসংখ্যক মানুষের সাথে সামিল হয়ে ইফতার করার জন্য। এত মানুষের সাথে মিলিত হয়ে ইফতার করে আমি আনন্দিত।

এ মাজারে প্রতিদিন ইফতার করেন ভিক্ষুক ‍তুলা মিয়া, আব্দুল হাকিম ও মো.আব্দুল হেকিম। তারা জানান, পবিত্র রমজান মাস শুরুর পর থেকেই আমরা রোজ মাজারে ইফতার করি। আগে আয় রোজগার ভাল হলেও রোজা শুরু হওয়ার পর থেকে রুজি কমে গেছে। তবে শবে কদর থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত রোজগার আবার অনেক বেড়ে যায় বলে জানান তারা।

মানত পালন করতে ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে এসেছেন মো. নাসির। সারাদিন মাজারে সময় কাটিয়ে সন্ধ্যাবেলায় মাজারেই ইফতার করেন তিনি। অসংখ্য মানুষের সাথে একসাথে বসে ইফতার করায় তিনি আনন্দিত। নাসির বলেন, এবারই প্রথমবার আমি হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজারে এসেছি। মাজারের মধ্যেই ইফতারের আয়োজন খুবই ভাল লেগেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত