০৩ মার্চ, ২০১৮ ০১:৪৩
শ্রমজীবী এক কিশোরকে নিয়ে কবি সুমন গেয়েছেন- 'বয়স বারো কি তেরো, বড়জোর চোদ্দ,/রিক্শা চালাতে শিখে নিয়েছে সে সদ্য।'
এ কিশোর পারবে কি এই বোঝা টানতে?/এই বাবু কোনো দিন পারবে কি জানতে?'
হাওরে গিয়ে এখন এরকম কিশোর-কিশোরীর দেখা মিলবে অহরহ। বারো-তেরো বছর বয়সেই, কিংবা তারও আগেই খেলার সামগ্রী আর বইখতো ছেড়ে সংসার জোয়াল কাধে তুলে নিতে হয়েছে তাদের। বন্যায় সব হারানো হাওরে সম্প্রতি বেড়েছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। ঝুঁকিপূর্ণ পেশায়ও যুক্ত হচ্ছে শিশুরা।
যে সময়টা তাদের বইখাতা নিয়ে পাঠশালায় যাওয়ার কথা। সময় কাটানোর কথা খেলাধুলায়। কিন্তু বাস্তবতা তাদের শৈশব উপভোগ করতে দেয়নি। ছিটকে ফেলেছে স্কুলের গন্ডি থেকেও। কঠিন-রুক্ষ এক জীবনে শৈশবেই পা রাখতে হয়েছে তাদের। সংসারের দায় মেটাতে কঠিনতম কাজে নামতে হয়েছে।
এই মেয়েটার নাম হাদিসা। বয়স বড়জোর ১০। সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের রাজাপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে সে। ৪ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদী তীরের পাথর কোয়ারিতে কাজ করে হাদিসা। তার কাজের সঙ্গী হয়েছে ৬ বছরের ছোট বোন লাভিয়াও।
জাদুকাটা নদীতীর এলাকারই অস্থায়ী কলোনিতে বাবা মায়ের সাথে থাকে ওরা। হাদিসার ইচ্ছা পড়ালেখা করার। কিন্তু অভাব-অনটনের সংসারে পড়ালেখার স্বপ্ন দেখার সুযোগ নেই তার। তার মতো হাজারো শিশু জীবনের শুরুটাতেই পা দিয়েছে কঠিন এক অনিশ্চয়তার দিকে। শিক্ষাহীন অন্ধকারের দিকে।
পাথর কোয়ারিগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই শ্রমিক মারা যাচ্ছে। সাম্প্রতিকালে সিলেটের পাথরে কোয়ারিগুলোতে মারা যাওয়া শ্রমিকদের বেশিরভাগই সুনামগঞ্জের। হাওরপাড়ের। প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়াচ্ছে মৃত্যু, তবু হাওরপাড়ের শিশুরাও জড়িয়ে পড়েছে পাথর তোলার কাজে।
ক্ষুধার কষ্টের কাছে এখানে মৃত্যুভয়ও পরাজিত। বাকীসব তো তুচ্ছ।
আপনার মন্তব্য