নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ জুন, ২০১৯ ২৩:০৬

ঈদে রেশমার ‘প্রজেক্ট গিফট বক্স’

'প্রজেক্ট গিফট বক্স। সামনে ঈদ হঠাৎ আপনার বাসায় অপরিচিত কেউ একটি রঙ্গিন কাগজে মুড়ানো গিফট বক্স দিয়ে গেলো তখন আপনার অনুভুতিটা কেমন হবে? গিফট পেতে কার না ভালো লাগে। আমরা তো সচরাচরই কাউকে না কাউকে গিফট দেই, নিজেরাও গিফট পাই। কিন্তু একবারও কি চিন্তা করেছেন আমরা কি কেউ কখনও কোন রিকশা চালক, প্রতিবন্ধী, বিধাব অথবা গরীব মানুষকে এইভাবে গিফট দিয়েছি? একবারও কি চিন্তা করেছেন গিফট বক্সটা পাওয়ার পর ওদের অনুভূতি টা কেমন হয়েছে? আলহামদুলিল্লাহ, আজ গিফট  বক্স  প্রজেক্ট এর প্রথম  দিন  ছিলো। আজ নতুন কিছু অনুভব করলাম। যা প্রকাশ করার মতো না। অসংখ্যা ধন্যবাদ জানাই তাদের যাদের  সহযোগীতায় এই মানুষ গুলার মুখে হাসি ফুটেছে।'

নিন্ম আয়ের মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঈদের গিফট সামগ্রী দেওয়া ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এভাবেই পোস্ট দেন ইচ্ছাপূরণ সামাজিক সংগঠনের জান্নাতুল রেশমা।

এই ঈদে দরিদ্র মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ব্যাতিক্রমি এই কাজ কারার আগ্রহ জানিয়ে গত ২১ মে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন রেশমা। পোষ্টে জানান-  বিধবা, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক মানুষদের পরিবারের জন্য ঈদের খাবার ও কাপড় সম্বলিত একটি গিফট বক্স দিতে চান। এই কাজটি বাস্তবায়নের জন্য ফেসবুকের সকল বন্ধুদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। তার আহবানে সাড়া দেন অনেকেই। রেশমা তাদের সাথে যোগাযোগ করে ফান্ড সংগ্রহ করে কার্যক্রম শুরু করেন রোববার।   

সিলেটের কানিশাইল, শামিমাবাদ ও কানুয়া এলাকার ৪টি পরিবারের দোকান বাকি পরিশোধ করে ঈদের গিফটবক্স দিয়েছেন রেশমা। যে ফান্ড সংগ্রহ হয়েছে তা দিয়ে হবিগঞ্জে আরো ৬টি পরিবারকে সহায়তা করা হবে বলে জানান রেশমা।

জান্নাতুল রেশমা ইচ্ছাপূরণ নামের একটি সংগঠনের এর মাধ্যমে র্দীঘদিন যাবত সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে কাজ করছেন। চলতি বছর ইচ্ছা পূরণ আবাসন নামে একটি প্রকল্পের হাতে নিয়ে সিলেট রেলস্টেশন কলোনির ১৩ জন শিশুকে পুনর্বাসন করে রেশমার ইচ্ছা পূরণ সংগঠন। বিভিন্ন সামাজিক কাজের জন্য ইতোমধ্যে তার পরিচালিত এই সংগঠনটি জয়বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে।

তার চলমান ঈদের কার্যক্রম নিয়ে রেশমা বলেন, আমাদের সমাজে বেশিভাগ অসচ্ছল পরিবার দোকান বাকি করে পরিবারের খাদ্য চাহিদা মেটান। এবং ঈদ আসলে দোকানদার খুব বেশি চাপ দেন দোকান বাকি পরিশোধ করার জন্য। অনেকেই অনেক কষ্ট করে দোকান বাকি পরিশোধ করেন তারা। সেই দরিদ্র মানুষদের একটু শান্তি দিতেই আমি এই বছর ব্যাতিক্রম একটি কাজ হাতে নিয়েছি। এই কাজটি করার জন্য ফেসবুকে পোষ্ট দিলে অনেকই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সবার সহযোগিতায় ইতোমধ্যে ৪টি পরিবার কে সহযোগিতা করেছি। যে ফান্ড সংগ্রহ হয়েছে তাতে আরো ৬টি পরিবারকে সহায়তা করতে পারবো।

এই কার্যক্রম সর্ম্পকে জান্নাতুল রেশমা বলেন, গিফট পেতে কার না ভালো লাগে। ছোট বড় সবাই আমরা গিফট পেতে ভালবাসি। গিফট পাওয়ার অনুভুতিটুকু আমরা বুঝি। কিন্তু একজন প্রতিবন্ধী, রিকশা চালক, মাটি ও ইট ভাঙ্গার শ্রমিক, বিধবা তারা কখনই এই অনুভুতিটা বুঝার সুযোগ পান না। তাই সেই অনুভুতি বুঝানোর জন্যই এই ঈদে আমার ব্যাতিক্রম উদ্যোগ ‘গিফট বক্স’।

তিনি বলেন, ঈদে আমরা সাধারণত সুবিধাবঞ্চিত শিশু, নারী ও পুরুষদের হাতে হাতে লুঙ্গি, কাপড় দিয়ে থাকি। আমরাও তাই দিচ্ছি কিন্তু একটু ব্যাতিক্রম ভাবে। কারণ আমরা চাই তারা যেন এসবকে দান মনে না করে উপহার মনে করেন।

রেশমা বলেন, যেহেতু আগে থেকেই আমি সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে কাজ করছি তাই মানুষদের খুজে বের করতে বেশি কষ্ট হয়নি। ইতোমধ্যে ৪টি পরিবারের মধ্যে যাদের মুদির দোকানের বাকি আছে তা পরিশোধ করি এবং পরে তাদের পরিবারকে একটি ‘গিফট বক্স’ দেই।

কি আছে এই গিফট বক্সে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই গিফট বক্সে ঈদের কাপড় ও ঈদের খাদ্য সামগ্রী প্যাকেট করেছি আমরা। যেমন, শাড়ি, বাচ্চাদের জন্য কাপড়, মেক্সি, সেমাই, নডুলস, ময়দা, তেল, চিনি, বিস্কুট, নারিকেল, হাত পাঁকা ইত্যাদি। পরিবারের সদস্য অনুযায়ী গিফট বক্স করা হয়েছে।  

এই গিফট বক্স মানুষজনকে পৌঁছে দেওয়ার অনুভূতি প্রসঙ্গে রেশমা বলেন, আমি প্রথম ও দ্বিতীয় ‘গিফট বক্স’ দিতে গিয়ে কিছুটা ইমোশনাল হয়ে যাই। প্রথম গিফট বক্স দেই দক্ষিন সুরমার খানুয়া গ্রামের এক প্রতিবন্ধী ও বিধবা পরিবারে। প্রায় ৬০ বছরের বিধবা মা  আর প্রতিবন্ধী মেয়ের সংসার। পরিবারের আর কেউ নেই। তাদের জন্য গিফট বক্স নিয়ে যখন ঘরে ঢুকলাম মেয়েটা সে কি খুশি। সে কখনও এমন রঙ্গিন বক্স দেখেনি তাই খোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেলো। প্যাকেট খুলে খুশিতে আত্মহারা সে। তার খুশি দেখে বিধবা মা তখনও কাঁদছেন।

রেশমা বলেন, এই মানুষগুলো না পারেন কারো কাছে হাত পাততে না পারেন ভিক্ষা করতে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার। আর এই ভালো কাজের জন্য আমার ফেসবুকে পরিচিত বড় ভাই, ছোট ভাই ও বন্ধুরা  সহযোগিতা করেছেন। অনেকেই সহযোগিতা করে নাম প্রকাশ করতেও নিষেধ করেছেন। ধন্যবাদ জানাই তাদের যারা এই গরীব মানুষদের মুখে হাসি ফোটাতে বিভিন্ন ভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত