০৩ মে, ২০২১ ২১:১৭
আসনসংখ্যা তিন থেকে ৭৬। আর ভোটের হার ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ থেকে ৩৮ দশমিক ০২ শতাংশ।
পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে জয়ের আগাম ঘোষণা দেয়া বিজেপির পরাজয়ের পরেও দলটির যে আসলে উত্থান হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা সেভাবে হয়নি।
এর কারণ অবশ্য বিজেপিরই অতিকথন।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২ আসনের মধ্যে ১৮ আসনে জয়লাভ করেছিল। বিজেপি তখনই স্লোগান তুলেছিল, ‘উনিশে হাফ, একুশে সাফ’।
বাংলা দখলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ ২০০-এর বেশি আসনে জিতে বাংলায় বিজেপি সরকার গঠন করবে বলে দাবি করেছিলেন।
এমনকি ষষ্ঠ দফার ভোটের পর অমিত শাহ বলেছেন, ‘অধিকাংশ আসনে বিজেপি জিতে গেছে। দিদি এবার রাজভবনে হেঁটে গিয়ে, রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিন।’
বঙ্গ জয়ের আশায় মোদি-অমিত শাহ কার্যত ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গকে। তৃণমূলের অন্দরের ভাঙনকে সুকৌশলে ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু বিজেপির এই অতি সক্রিয়তা বাঙালি ভালোভাবে নেয়নি।
ভোটের ফল থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ছিল ঠিকই। কিন্তু তা এমন পর্যায়ে যায়নি যে, এখনই সরকার পাল্টে ফেলতে হবে।
তা ছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে ছিলেন শুধু অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদি।
বিজেপির ভোট প্রচারে যতটা জোর দেয়া হয়েছে জয় শ্রীরাম ধ্বনিতে, ততটা জোর দেয়া হয়নি, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর স্লোগানে।
ঝাঁকে ঝাঁকে তৃণমূল ভেঙে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন নেতারা। এসেছেন একঝাঁক তারকা মুখ। বাবুল সুপ্রিয়, লকেট চ্যাটার্জি, নিশীথ প্রামানিক, স্বপন দাশগুপ্ত, মুকুল রায়, শমীক ভট্টাচার্য, শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের বিজেপি নেতারা এবারের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিলেও মুকুল রায়, নিশীথ প্রামানিক, শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া তেমনভাবে কেউ সাফল্যের মুখ দেখেননি।
আগাগোড়া বিতর্কিত মন্তব্য করা বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘সভায় মানুষের ভিড় দেখে, ভেবেছিলাম ক্ষমতায় আসছি। যত মানুষ সভায় এসেছেন, সবাই আমাদের ভোট দেননি। হয়তো মানুষ আমাদের বিরোধী হিসেবে দেখতে চেয়েছে।’
বাঙালিয়ানার সঙ্গে বিজেপির সংস্কৃতির সংঘাতের প্রশ্নে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘আমরা বাংলার মানুষের মনের গতিবিধি বুঝতে পারিনি।’
কিন্তু পাঁচ বছরে তিন থেকে সাম্প্রতিক নির্বাচনে ৭৬ জন বিধায়ক পেতে চলেছে বিজেপি। এটিও বিশাল অর্জন হিসেবে দেখছেন কর্মী-সমর্থকরা।
যদিও অতিরিক্ত উচ্চাশার নিচে চাপা পড়ে গেছে রাজ্যে বিজেপির অভূতপূর্ব এই সাফল্য।
বিজেপির রাজ্য সহসভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, ‘আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি ঠিকই। কিন্তু আমাদের কাছে এই ফল মাইলস্টোন।’
বাম, কংগ্রেস বিধানসভায় শূন্য হয়ে গেছে। আইএসএফ একটিমাত্র আসনে জয়লাভ করেছে।
তাই এবার বিধানসভার ভেতর থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস আর বিজেপি মুখোমুখি। নির্বাচনে ৩৮.০২ শতাংশ ভোট পেয়ে বিরোধী দল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির মাইলস্টোন উত্থানই বটে।
আপনার মন্তব্য