ওয়েব ডেস্ক

২৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০১:৪২

এবার যুদ্ধাপরাধী সাকা-মুজাহিদের দণ্ডের সমালোচনায় পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল বিবৃতির পর এবার সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে ইঙ্গিত করে নেতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ডকে ‘পাকিস্তানের সমর্থকের’ বিরুদ্ধে প্রতিশোধ হিসেবে মন্তব্য করেছেন।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেন, 'পাকিস্তানের সমর্থক’ কারও বিরুদ্ধে প্রতিশোধ বন্ধ করার এটাই উপযুক্ত সময়।

রবিবার (২২ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেছেন।

পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল জিয়ো টিভির অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নিসার আলী খান দাবি করেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জনগণ অতীতের তিক্ততা পেছনে ফেলে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

তার মতে, ‘পাকিস্তানের সমর্থক’ কারও বিরুদ্ধে প্রতিশোধ বন্ধ করার এটাই উপযুক্ত সময়।

বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হলেও বিশ্ব নীরব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরো বিশ্ব বিশেষ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নীরবতায় তিনি বিস্মিত।

এর আগে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র কাজী খলিলুল্লাহ বলেন, “গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে আমরা লক্ষ্য করেছি যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এই ঘটনায় পাকিস্তান শঙ্কিত।”

পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “১৯৭১ সালের ঘটনার ব্যাপারে বাংলাদেশে যে ত্রুটিপূর্ণ বিচার চলছে সেবিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করেছি।”

পাকিস্তান সরকার তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৭৪ সালের ৯ই এপ্রিল যে সমঝোতা হয়েছে সে অনুসারে বাংলাদেশে জাতীয় সমঝোতার প্রয়োজন আছে। এই সমঝোতায় ১৯৭১ সালের ব্যাপারে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর কথা বলা হয়েছে।”

এরপর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সর্বশেষ রায় কার্যকর সম্পর্কে আপত্তিকর সমালোচনা করায় ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাসের হাইকমিশনার সুজা আলমকে রবিবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে ডেকে এনে তিরস্কার করে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পাশাপাশি দেশটির হাইকমিশনারকে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতেও বলা হয়েছে।

হাইকমিশনার সুজা আলমকে ডেকে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান এমন মন্তব্য করতে পারে না। ঘটনাটি দৃষ্টিকটু এবং শিষ্টাচার বর্হিভূত। কেননা যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ জনগণেরই এই বিষয়ে স্বতস্ফূর্ত সমর্থন এবং সহযোগিতা রয়েছে।

এই সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, পাকিস্তানের উচিত নিজেদের দিকে তাকানো। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থা নিয়ে তাদের ভাবার কোনো অধিকার নেই।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শীর্ষ দুই যুদ্ধাপরাধী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে শনিবার দিনগত রাতে (রবিবার, ২২ নভেম্বর) ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরপর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ধরনের বিবৃতি দেয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত