ডেস্ক রিপোর্ট

০৭ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ০২:৩১

ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশের রাজনীতি: দ্যা ইকোনোমিস্ট

বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিকে আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত না করে সরকার রাজনৈতিক সঙ্কট মনে করবে, এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অন্যভাবে বলা চলে, নির্বাচনের ডাক দেয়ার বিষয়ে সরকার একেবারেই উদাসীন। এতে রাজনীতি ভেঙে পড়েছে।

ব্রিটিশ সপ্তাহিক দি ইকোনোমিস্টের চলমান (প্রিন্ট) সংস্করণে প্রকাশিত নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। 'শোডাউন ইন বাংলাদেশ অন ফায়ার' শিরোনামের ওই নিবন্ধ শুরু করা হয় এক রিকশাচালকের দুর্ভোগের বৃত্তান্ত টেনে- 'গত মাসে ৪৫ বছর বয়সী রিকশাচালক অমূল্য চন্দ্র বর্মণ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে নিজ গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন; কিন্তু এখন তার ঠাঁই হয়েছে রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। তার বাসে ছোড়া একটি পেট্রলবোমা কোলের ওপর থাকা ব্যাগে গিয়ে পড়েছিল। বোমায় তার মুখ ও হাত পুড়ে যায়। আর হাতের ব্যাগ, যার ভেতর তার এক মাসের জমানো টাকা ছিল, সেটাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে তিনি অন্তত বেঁচে আছেন। এ সপ্তাহে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলায় আটজন প্রাণ হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ডাকা এক মাসব্যাপী চলা অবরোধে প্রায় ৬০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।'

নিবন্ধে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার অবস্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলা হয়, তার দল বিএনপির সড়ক-রেল ও পানিপথ অবরোধে দেশ অচল হয়ে গেছে। এই দুর্ভোগের পাশাপাশি যোগ হয়েছে হরতাল। নিবন্ধে বলা হয়, ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে এ অস্থিরতার সূত্রপাত হয়। এতে দাবি করা হয়, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিরোধী দলের ১০ হাজারেরও বেশি কর্মী আটক হয়েছেন। বিএনপির অধিকাংশ নেতা জেলে, নির্বাসনে কিংবা পলাতক রয়েছেন। এ সপ্তাহে সরকার সাময়িকভাবে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। অবরোধ প্রত্যাহারে বাধ্য করাতে এ চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে অনুমেয়। কিন্তু তিনি (খালেদা জিয়া) শেষ দেখার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেই মনে হচ্ছে।

নিবন্ধে অভিযোগ করা হয়, ২০০৯ সালের শুরুতে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা সুরক্ষিত করেছে এবং বিএনপির জন্য ক্ষমতায় যাওয়াটা অসম্ভব করে তুলেছে। সেটা করতে আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়েছে। এতে বলা হয়, সরকারের দাবি- বিএনপির সন্ত্রাস ও নাশকতা তারা মোকাবিলা করছে। আবার বিরোধী দলের অভিযোগ, সরকার একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় লিপ্ত। উভয় দলেরই যুক্তি রয়েছে। নিবন্ধে বলা হয়, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, খালেদা জিয়া এখন দেশকে এমন এক অবস্থায় দাঁড় করাতে চান যেখানে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে। তারা (সেনাবাহিনী) এটা নাও করতে পারে। তারা তাদের সুনাম এবং জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী মিশনে আকর্ষণীয় দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ, পাছে পশ্চিমা দেশগুলো তাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে অন্যতর পদক্ষেপ নেয়।

নিবন্ধের শেষ অনুচ্ছেদে বলা হয়, বিএনপির সড়ক অবরোধ ও সহিংসতা এবং (সরকারের) দমন-পীড়ন বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী আগে অথবা পরে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হতে পারে। চলমান পরিস্থিতিকে আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত না করে সরকার রাজনৈতিক সঙ্কট মনে করবে, এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অন্যভাবে বলা চলে, নির্বাচনের ডাক দেয়ার বিষয়ে সরকার একেবারেই উদাসীন। এতে রাজনীতি ভেঙে পড়েছে। অমূল্য চন্দ্র বলছিলেন, 'আমরা গরিব মানুষ। কোনো দল করি না। তারপরও দুই দলের সংঘর্ষে আমরা চরম দুর্ভোগের শিকার।

দ্যা ইকোনোমিস্টের নিউজ লিংক:  http://www.economist.com/news/asia/21642225-country-brink-fire

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত