আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৬ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ০২:৫৮

আইএসের মানচিত্রের পরিধি বাড়ছে

ইরাক ও সিরিয়ায় আমেরিকার নেতৃত্বাধীন জঙ্গিবিরোধী বিমান হামলা পাঁচ মাস পেরিয়েছে। এই পাঁচ মাসে জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করে প্রায় ৮০০ বিদেশি বিমান হামলা হলেও থামানো যায়নি জঙ্গিগোষ্ঠী 'ইসলামিক স্টেটের' (আইএস) উত্থান। সংবাদসূত্র : ফক্স নিউজ, দ্য ডেইলি বিস্ট ।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত নতুন একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই চার মাসে সিরিয়ায় তাদের মানচিত্র বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি বর্তমানে দেশটির এক-তৃতীয়াংশ এখন তাদের প্রভাব বলয়ের মধ্যে। সাম্প্রতিক মাসে তারা গ্রামাঞ্চলে দখল বৃদ্ধি করে।

প্রতিবেদনে আমেরিকার সরকারি ও বেসরকারি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অংশের নিয়ন্ত্রণ এখন আইএসের হাতেই। তাছাড়া তারা ক্রমেই শহরমুখী হচ্ছে। মানচিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আলেপ্পোসহ দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে সম্প্রতি তাদের কর্মকাণ্ড আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অঞ্চলটি আগে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

অন্যদিকে, আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ডেইলি বিস্টের অপর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আইএসবিরোধী আন্তর্জাতিক জোটের এত বিমান হামলায়ও বড় কোনো ক্ষতির শিকার হতে হয়নি আইএসকে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা 'ইন্সটিটিউশন ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার'-এর সিরিয়া বিষয়ক গবেষক জেনিফার ক্যাফারেলা বলেন, 'সিরিয়ায় আইএস কোনো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হারায়নি।'

অপরদিকে, আইএসের ভূমি দখল বৃদ্ধি পেয়েছে। তুরস্ক সীমান্তবর্তী সিরিয়ার কোবানি শহরের আশপাশের এলাকায় তাদের প্রভাব বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। সিরীয় আমেরিকানদের সংগঠন 'কোয়ালিশন ফর এ ডেমোক্রেটিক সিরিয়ার' (সিডিএস) তৈরি করা নতুন এক মানচিত্রে দেখা গেছে, গত বছরের বিমান হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত আইএসের সীমানা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমির নিয়ন্ত্রণের চেয়ে মানুষের নিয়ন্ত্রণ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর সেদিক থেকে হিসাব করলেও আইএসের পরিধি বেড়েই চলেছে। সিডিএস আরো জানায়, আমেরিকান হামলা শুরু হওয়ার পর নতুন প্রায় ১০ লাখ মানুষের ভূমি আইএস বা আল-নুসরা ফ্রন্টের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আইএসের সম্প্রসারিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে আছে আলেপ্পোর সীমান্তবর্তী হোমস মরুভূমি। এটি জঙ্গিদের কথিত রাজধানী রাকা হয়ে ইরাকি সীমান্তে চলে গেছে। এটি একটি গ্রামীণ এলাকা। আর এর নিয়ন্ত্রণ পেতে আইএসকে তেমন বেগ পেতে হয়নি।

গবেষক ক্যাফারেলা বলেন, নতুন এই গ্রামীণ জনপদ আইএসের কাছে ভূ-রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর মোস্তফা বলেন, 'সিরিয়ার অভ্যন্তরে মধ্যপন্থী বিদ্রোহী এবং জোট বিমান হামলার মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতার অভাব ছিল। বরং বিদেশি বাহিনীর বিমান হামলার জন্য আইএস অন্যান্য কট্টরপন্থীর সমর্থন জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছে।

সিরিয়ার একটি বিদ্রোহী সংগঠন হতাশা প্রকাশ করে বলেছে, বিদেশি হামলাগুলো আইএসের কেন্দ্রীয় অবকাঠামোতে চালানো হয়। কিন্তু যুদ্ধরত অবস্থায় সম্মুখ সারিতে তারা বিমান হামলার শিকার হলে তাদের পিছু হঠতে বাধ্য করা সম্ভব হতো। মোস্তফা বলেন, 'সিরিয়া-ইরাকে জোট বাহিনীর হামলাগুলো যেন পাকিস্তান-ইয়েমেনে ড্রোন হামলার মতো মনে হচ্ছে। ওইসব হামলা যেন শুধু জঙ্গিগোষ্ঠীর নেতাদের হত্যা করার উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়। কিন্তু সম্মুখে শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে আইএস স্থানীয় যুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে পরিণত হচ্ছে।'

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সিরিয়ায় আইএসের আধিপত্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ইরাককে অগ্রাধিকার দেয়া। আবার অনেক ক্ষেত্রে আসাদবিরোধী শিবিরে লড়াইরত অনেক যোদ্ধা দল পরিবর্তন করে যোগ দিচ্ছে আইএসে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোবানি শহরে বিমান হামলায় স্থলে যুদ্ধরত কুর্দি যোদ্ধারা সাফল্য পেলেও অন্যখানে সফল হয়েছে আইএসই। অন্যদিকে, ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসবিরোধী হামলায় এরই মধ্যে ১২০ কোটি ডলার খরচ করেছে। তবে পেন্টাগনে সংবাদ সম্মেলনে আমেরিকার সামরিক কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেন, তাদের আইএসবিরোধী প্রচেষ্টা সঠিক পথেই রয়েছে।

 

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত