সিলটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

০৩ মে, ২০১৬ ১০:১৬

আইএসের অনেক কাজই লাদেন সমর্থন করতেন না!

পাঁচ বছর আগে ঠিক এই দিনে (২ মে) মার্কিন কমান্ডোরা পাকিস্তানের ভেতর ঢুকে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে তার মৃতদেহ নিয়ে চলে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটা ছিল ১১ই সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার উপযুক্ত বদলা। আর পাকিস্তানের জন্য ছিল অপমান এবং বিড়ম্বনার। কারণ, তাদের না জানিয়েই যুক্তরাষ্ট্র রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে এই অভিযান চালিয়েছিল।

কিন্তু বিশ্বের সর্বাধিক পরিচিত সন্ত্রাসী নেতা, যাকে মার্কিনীরা বছরের পর বছর হন্যে হয়ে খুঁজছিল, তার মৃত্যুর পাঁচ পর জিহাদি ইসলাম কি দুর্বল হয়েছে? সন্ত্রাস কি কমেছে?

গবেষণা সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. সজ্জন গোয়েল বলছেন, 'বিন লাদেনের মৃত্যুর একটি প্রভাব তো পড়েছেই।' 'কিন্তু তার সেই জিহাদি স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায় অনেকাংশেই ঘাড়ে তুলে নিয়েছে আইসিস (ইসলামিক স্টেট)। তারা বহুজাতিক একটি সন্ত্রাসী প্রকল্প গড়ে তুলছে' যোগ করেন তিনি।

অনেকের কাছে ১৯৮৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ২২ বছর ধরে বিন লাদেনের পরিচালিত আল কায়দার সঙ্গে আইএসের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। দুটো গোষ্ঠীই ইসলামের কট্টর সুন্নি ভাবধারার ধারক। তাদের সঙ্গে কেউ দ্বিমত করলেই তাদেরকে ইসলামের শত্রু বলে মনে করে তারা।

জেতার কৌশল হিসাবে আল কায়দার মত আইএস একইভাবে আত্মঘাতী হামলার আশ্রয় নেয়, নিরপরাধ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করতেও তাদের কোনো দ্বিধা নেই।

বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলেন, তারপরও বিন লাদেনের আল কায়দার সঙ্গে আইএসের কিছু তফাৎ দেখতে পান তিনি। তার মতে, 'আবু আবদুল্লাহ (অনুসারীদের কাছে বিন লাদেন এই নামে পরিচিত ছিলেন) যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তিনি আইএসের অনেক কর্মকাণ্ড সমর্থন করতেন না।' বিন লাদেন ধৈর্যশীল ছিলেন। এক-দুই প্রজন্মের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ছিল বিন লাদেনের।

বিন লাদেন মনে করতেন, নাইন ইলেভেনের মত ব্যাপক সন্ত্রাসী হামলায় যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো মনোবল হারিয়ে ফেলবে। হতাশ হয়ে তারা এক পর্যায়ে মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মনিরপেক্ষ এবং রাজতন্ত্রগুলোর ওপর সমর্থন তুলে নেবে। এবং এক পর্যায়ে জিহাদিরা ক্ষমতা দখল করে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবে।

এমনকি মৃত্যুর আগে আল কায়দার সহযোগী দুএকটি গোষ্ঠী ইরাকে যেভাবে চরম সহিংসতার পথ নিয়েছিল, বিন লাদেনের তাতে সমর্থন ছিল না।

ড. গোয়েল বলেন, 'আইএস বিন লাদেনের আল কায়দা থেকে কিছুটা ভিন্ন পথ নিয়েছে... তারা চোখ বন্ধ করে সুন্নি মুসলিমদেরও হত্যা করছে, নারী-শিশুও তোয়াক্কা করছে না।' তার দাবি, 'মানবপাচারসহ নানা ধরনের অপরাধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত আইএস, আল কায়দা এসব করতো না।'

রিচার্ড ক্লার্ক ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বুশকে সন্ত্রাস মোকাবেলায় পরামর্শ দিতেন। তিনি মনে করেন, ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে আল কায়দা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আল কায়দার উত্তরসূরি আইএসকে মোকাবেলা করা আরও কঠিন হয়ে গেছে পশ্চিমাদের জন্য।

তাদের নেতা আবু বকর আল বাগদাদিকে দেখা যায়না বললেই চলে। তাছাড়া, নেতার মৃত্যু হলেও, সংগঠন কিভাবে চলবে তার একটি ছকও আইএস তৈরি করেছে বলে অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত