০৩ জুন, ২০১৬ ০৮:৪৯
একশ বছর আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুর্কি অটোমান শাসকদের নৃশংসতায় প্রায় ১৫ লাখ আর্মেনীয় হত্যার ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ ঘোষণা দিয়ে জার্মানির পার্লামেন্ট একটি প্রতীকী প্রস্তাবনা অনুমোদিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির পার্লামেন্টে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের উপস্থাপন করা এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবটি সমর্থন জানায় বিরোধী দলে থাকা গ্রিন পার্টিও।
তবে জার্মানির এ পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ আখ্যা দিয়েছে তুরস্ক। দেশটির প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গেই বলেছেন তারা জার্মানি থেকে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। তিনি এ পদক্ষেপকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দেন। এতে করে দুই নেটো দেশের বন্ধুত্ব পরীক্ষার মুখে পড়বে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
এদিকে, জার্মানির এ উদ্যোগ তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ককে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের ক্ষমতাসীন একে পার্টির মুখপাত্র।
আর্মেনীয়দের দাবি, ১৫ লাখ আর্মেনীয় তুর্কি অটোমানদের হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিল। কিন্তু তুরস্ক সব সময়ই এ গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। নিহতের সংখ্যা আরও কম ছিল এবং ঐ সহিংসতা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিণতিতে হয়েছিল বলে দাবি তাদের।
ফ্রান্স ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর বিপরীতে বার্লিনই দীর্ঘদিন যাবৎ ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করার বিরোধী ছিল। এ যাবৎ শুধু বামদলের প্রস্তাবেই ‘গণহত্যা' শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছিল; অন্যান্য দলগুলো ‘বিতাড়ন ও হত্যাকাণ্ড' বলত ৷
কিন্তু চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের কোয়ালিশন সরকার পার্লামেন্ট সদস্যদের চাপে শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবনায় ‘গণহত্যা’ ঘোষণা করল। প্রস্তাবনার শিরোনাম এবং টেক্সটে গণহত্যা শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। ওই হত্যা বন্ধে কোনও কিছু না করার কারণে জার্মানিও কিছুটা দায়ী বলে প্রস্তাবনায় স্বীকার করা হয়েছে।
জার্মানির ক্ষমতাসীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বিরোধী গ্রিন পার্টে আর্মেনীয় গণহত্যাবিষয়ক এ প্রস্তাব আনে। ফলে জার্মান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্ডেস্টাগের ভোটে মের্কেল ভোটে উপস্থিত না থাকলেও পার্লামেন্টারি দলগুলো একযোগে প্রস্তাবনার পক্ষে ভোট দেয়।
উদ্যোগটি এমন সময় এল যখন অভিবাসীর ঢল সামলাতে ইইউ র তুরস্কের সহায়তা প্রয়োজন। নিয়ে জার্মানি- তুরস্ক সংঘাতে অভিবাসীর বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে আর্মেনিয়া জার্মানির পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।১৯১৫ সালের ওই হত্যাকাণ্ডকে আর্মেনিয়া ‘গণহত্যা’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়ার জন্য অনেকদিন থেকেই দাবি জানিয়ে আসছে।
আর্মেনিয়াসহ অনেক দেশের ইতিহাসবিদরাও মনে করেন আর্মেনীয়দেরকে অটোমান বাহিনী ১৯১৫ সালে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। আরও বেশ কিছু পশ্চিমা দেশও এ বিষয়ে একমত৷
ইউরোপীয় পার্লামেন্টও আর্মেনীয় হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা'র স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব পেশ করেছে৷ এর আগে পোপ ফ্রান্সিস গত ১৩ এপ্রিল প্রকাশ্যে আর্মেনীয় হত্যাকাণ্ডকে ‘বিংশ শতাব্দীর প্রথম গণহত্যা’ অভিহিত করে তুরস্কের সঙ্গে বিরোধে জড়ান।
১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ২৪ ও ২৫ এপ্রিল- দুই দিনে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ নিহত হয় আর্মেনিয়ায়৷ সেই যুদ্ধের পর ধ্বংস হয় অটোমান সাম্রাজ্য৷ অটোমানদের হামলাতেই নিহত হয়েছিল এ মানুষগুলো। পরে ১৯২৩ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের ভস্মের ওপর গড়ে ওঠে আধুনিক প্রজাতান্ত্রিক তুরস্ক ৷
আপনার মন্তব্য