অনলাইন ডেস্ক

১৩ অক্টোবর, ২০১৬ ১৭:২১

সাহিত্যে নোবেল পেলেন ‘একাত্তরের বাংলাদেশবন্ধু’ বব ডিলান

এ বছরের সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন একাত্তরের বাংলাদেশ বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত পৃথিবীখ্যাত মার্কিন সংগীতশিল্পী ও গীতিকার বব ডিলান। বব ডিলানের পুরো নাম রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান। সংগীতে কাব্যিক মূর্ছনা সৃষ্টির জন্যে তিনি পেলেন এ পুরষ্কার।

বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সুইডিশ নোবেল কমিটি এই ঘোষণা দেয়। বব ডিলান হচ্ছেন সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১১৩তম ব্যক্তি। তাঁর এ পুরস্কারপ্রাপ্তির ঘোষণা দেন রয়‌্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমির স্থায়ী সচিব সারা দানিউস।

৭৫ বছর বয়সী ডিলান মার্কিন সংগীতে নতুন কাব্যিক ধারা নিয়ে আসার কথা উল্লেখ করে তাঁকে এই পুরষ্কার দেওয়া হয়। তাঁর গান মানবতার পক্ষে ও যুদ্ধের বিপক্ষে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে ডিলানের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হবে পুরস্কারের ৮০ লাখ ক্রোনার।

বব ডিলান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নিয়ে জর্জ হ্যারিসনের সাথে বিখ্যাত কনসার্ট ফর বাংলাদেশেও অংশ নিয়েছিলেন।



১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে আলফ্রেড নোবেল তার মোট উপার্জনের ৯৪% (৩ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) দিয়ে তার উইলের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এই বিপুল অর্থ দিয়েই শুরু হয় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান। পরে তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি।

আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর পর আইনসভার অনুমোদন শেষে তার উইল অনুযায়ী নোবেল ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। তাদের ওপর দায়িত্ব বর্তায় আলফ্রেড নোবেলের রেখে যাওয়া অর্থের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করা এবং নোবেল পুরস্কারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করা। আর বিজয়ী নির্বাচনের দায়িত্ব সুইডিশ একাডেমি আর নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে ভাগ করে দেওয়া হয়।

১৯০১ সালে শুরু হয়ে এ নিয়ে ১০৮ বার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে। সাহিত্যে গত বছর ২০১৫ সালে নোবেল পুরস্কার পান বেলারুশের লেখক ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ।

উল্লেখ্য, ১৯৪১ সালের ২৪ মে মিনেসোটার ডুলুথে তার জন্ম। মধ্যবিত্ত এক পরিবার থেকে উঠে আসা বব ডিলানের প্রথম অ্যালবামের নাম ছিলো ‘বব ডিলান’। ১৯৬২ সালে প্রকাশিত এই অ্যালবামিটই মোড় ঘুড়িয়ে দেয় ক্লাব ও ক্যাফেতে গান গেয়ে চলা ডিলানের জীবনের।


এর পর ধীরে ধীরে অনেকগুলো অ্যালবাম বাজারে এসেছে তার যেগুলো তৎকালীন প্রচলিত সঙ্গীতের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে ব্রিঙিং ইট অল ব্যাক হোম(১৯৬৫) ‘হাইওয়ে রিভিজিটেড’(১৯৬৫), ব্লন্ডি অন ব্লন্ডি(১৯৬৬), ওহ মার্সি(১৯৮৯), টাইম আউট অব মাইন্ড(১৯৯৭) এবং মডার্ন টাইম(২০০৬) অন্যতম।

১৯৬৭ সালে বব ডিলানের জীবন নিয়ে নির্মাতা ডি.এ.পেনিবেকার নির্মাণ করেন ডোন্ট লুক ব্যাক নামে একটি ডকুমেন্টারি। মানুষের সামাজিক অবস্থান, ধর্ম, রাজনীতি এবং ভালোবাসা নিয়ে অসংখ্য গান রচনা করেছেন বব ডিলান। পাশাপাশি পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন নিজের আঁকিয়ে, অভিনেতা এবং স্ক্রিপ্টরাইটার চরিত্রের সঙ্গেও।


বাংলাদেশের মানুষের বন্ধু হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তান বাহিনী বাংলাদেশে নির্বিচারে গণহত্যা চালায় তখন। পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ, নিরস্ত্র জনগণের ওপর নির্বিচারে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার খবর বন্ধুবান্ধব ও সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জেনে কিছু একটা করার তীব্র তাগিদ থেকেই বিটলস খ্যাত জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশঙ্কর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের সাহায্যার্থে আয়োজন করেছিলেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’।

১ আগস্টের ওই কনসার্টে মার্কিন রক ও ফোকসংগীতের জগতে ষাটের দশকেই কিংবদন্তিতুল্য নাম বব ডিলান তাঁর বিখ্যাত ‘ব্লোইং ইন দ্যা উইন্ড’ গানটি পরিবেশন করেছিলেন। সে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই দীর্ঘ আট বছর পর এটাই ছিল বব ডিলানের জনসমক্ষে প্রথম সংগীত পরিবেশনা।

ব্রিটিশ কবি অ্যালেন গিনসবার্গের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বন করে লেখা বিখ্যাত কবিতা ‘যশোর রোড’কেও গানে রূপান্তরের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন বব ডিলান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত