ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১৭ এপ্রিল, ২০১৫ ০১:৪৮

ইরাক-সৌদি আরবের মধ্যকার উত্তেজনায় বেকায়দায় যুক্তরাষ্ট্র

মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার দু’মিত্র ইরাক ও সৌদি আরবের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আইএসবিরোধী জোট নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তারা। 

বুধবার ইরাকের প্রধানমন্ত্রী ইয়েমেনে সৌদি বিমান অভিযানের সরাসরি সমালোচনা করলে এবং এক শীর্ষ সৌদি কর্মকর্তা ঐ সমালোচনার কোন যুক্তি নেই বলে মন্তব্য করলে দুটি দেশের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়।

ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে গিয়ে পরস্পরবিরোধী মতাদর্শের দেশগুলোর জোটকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে ওবামা প্রশাসনকে যে কত বেগ পেতে হচ্ছে, ঐ বিরোধেই তা প্রতিফলিত হয়।

এ জোটে সুন্নী আরব রাষ্ট্রগুলো ও শিয়া নিয়ন্ত্রিত ইরাক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইরান কখনও কখনও ইরাকের পৃষ্ঠপোষকতা করলেও মতাদর্শের দিক দিয়ে সৌদি আরবের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে রয়েছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টের।

ইরাক ও সৌদি আরব উভয় দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সম্পর্ক থাকলেও ঐ দুটি দেশ খুব ঘনিষ্ঠ মিত্র নয়। কিন্তু ওবামা প্রশাসন সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অভিন্ন উদ্বেগের ভিত্তিতে এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার স্বার্থে দুটি দেশকে একত্র রাখতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতিদের বিরুদ্ধে সৌদি বিমান হামলা অব্যাহত রাখার প্রয়াসে ভারসাম্য বজায় রাখার কঠিন কাজে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু ইরাকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে গিয়ে ওবামা প্রশাসনকে ইরাকি সামরিক অভিযানে সহায়তা করতে হচ্ছে- যে অভিযানে ইরানও সমর্থন যোগাচ্ছে। 

যুক্তরাষ্ট্র সফররত ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি হোয়াইট হাউসের অতিথিশালা ব্লেয়ার হাউসে বুধবার একদল সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বললে ইরাকি সৌদি বাকযুদ্ধ শুরু হয়।

তিনি বলেন, ইয়েমেনে সৌদি অভিযান ও লড়াই বিরাট মানবিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। আবাদি বলেন, এ অভিযানের আদৌ কোন যুক্তি নেই। এটি প্রধানত ইয়েমেনের ভিতর ইয়েমেনের সমস্যা। এরপর তিনি বলেন, সৌদি অভিযান নিয়ে তার উদ্বেগের সঙ্গে ওবামা প্রশাসনও একমত হয়েছে।

আবাদি বলেন, প্রশাসন এ সংঘর্ষ যথা সম্ভব বন্ধ করতে চায়। প্রশাসনের কাছ থেকে আমি বুঝতে পেরেছি, সৌদিরা এ বিষয়ে সহায়ক নয়। তারা এখন কোন অস্ত্রবিরতি চায় না। প্রশাসন ত্বরিৎ একথা অস্বীকার করে যে, প্রেসিডেন্ট ওবামা মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে আবাদির সঙ্গে কোন বৈঠকে সৌদি বিমান অভিযান নিয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন।

জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক মুখপাত্র এ্যালিস্টেয়ার বাস্কে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়েমেনে সৌদি আরব ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের তৎপরতার সমালোচনা করেননি।

বাস্কে বলেন, একই সময়ে ওবামা ইরাকি প্রধানমন্ত্রীকে তার এ মত জানিয়ে দিয়েছেন যে, এটি যেন এক ব্যাপকতর সংঘাতে পরিণত না হয় এবং শেষ পর্যন্ত এক রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই কেবল ইয়েমেন সংঘাতের মীমাংসা করা যাবে।

আবাদি সাংবাদিকদের একথাও বলেন যে, সৌদি বিমান হামলা প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে সৌদি আরবের আরও সামরিক শক্তি প্রদর্শনের পূর্বসূচনা হতে পারে বলেও তিনি উদ্বিগ্ন।

এর কয়েক ঘণ্টা পর ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত আদেল আল জুবায়ের সৌদি দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এতে তিনি আবাদির মন্তব্যে কোন যুক্তি নেই বলার পাশাপাশি ইয়েমেনে সৌদি অভিযানের এক উচ্চ মাত্রার ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বিমান থেকে বোমা বর্ষণের ফলে জঙ্গী বিমান, হেলিকপ্টার, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং কমান্ড সেন্টারগুলো ধ্বংস হয়েছে।

সৌদি কর্মকর্তারা ইতোপূর্বে বলেন, তাদের বিমান হামলা ‘অপারেশন ডিভাইসিভ স্টর্ম’ হুদি বাহিনীকে দুর্বল করে দিতে কার্যকরতার পরিচয় দিয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত