সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

২৩ মার্চ, ২০১৭ ১৫:৪৭

কলকাতায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানোর দাবি নাকচ করে দিলেন ক্ষুব্ধ মমতা

কলকাতায় বেকার হোস্টেল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্য সরানোর দাবির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজ্য সচিবালয় নবান্ন থেকে কালীঘাটের বাড়িতে ফেরার পথে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে নিজের ক্ষোভের কথা জানান।

ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, "বঙ্গবন্ধু ঐতিহ্য, ঐতিহ্যের কোনো ইজারা হয় না। বঙ্গবন্ধু দুই বাংলার কাছেই শ্রদ্ধেয়, স্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্রেরণা। তাঁর স্মৃতি শ্রদ্ধার সঙ্গে সংরক্ষণ করাই আমাদের কর্তব্য।"

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানোর দাবি বরদাস্ত করা হবে না উল্লেখ করে মমতা বলেন, "এর কোনো রকম বিরোধিতাকে বরদাস্ত করা হবে না। কেউ প্রতিরোধ তৈরি করতে চাইলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

শুধু মুখ্যমন্ত্রী মমতা নন, রাজ্যের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও এই দাবিতে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো দাবি কেউ জানায়নি, তবে পত্র-পত্রিকায় এই খবর পাওয়া যাচ্ছে। আমরা এই ধরণের কোনও দাবিকে সমর্থন করবো না।

গত ১৮ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান ছাত্র-যুবকদের সংগঠন ‘সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন’ এর পক্ষ থেকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে চিঠি দিয়ে ৮ নম্বর স্মিথ রোডের বেকার হোস্টেলের চতুর্থ তলার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি সরানোর দাবি জানানো হয়।

সংগঠনের সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, মূর্তি প্রতিষ্ঠা ইসলাম ধর্মের আদর্শ বিরোধী। বেকার হোস্টেল রাজ্যের মুসলিম ছাত্রদের অন্যতম বড় আবাসিক হল। এখানে একটি মসজিদও রয়েছে। তাই ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষার স্বার্থে এই দাবি তুলেছেন তারা।

সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন বলে দাবি করা এই সংগঠনটির জন্ম ২০০৪ সালে। সংগঠনের সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামানের দাবি, তারা এই মূর্তি প্রতিষ্ঠার খবর আগে জানতেন না। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বিমান বসু বেকার হোস্টেল গিয়ে মাল্যদান করেন। সেই ছবি পরদিন পত্রিকায় দেখে তারা মূর্তির বিষয়টি অবগত হন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানান।

তিনি বলেন, বেকার হোস্টেলের আবাসিকদের মধ্যেও বিষয়টি ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

যদিও বেকার হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক দাবীর আহমেদ জানান, তিনি এই ধরণের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কোনো ঘটনা পাননি। এমন কি তার কাছে কেউ লিখিতভাবে কোন আবেদনও করেননি।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানোর দাবি তোলা সংগঠনটি নিয়ে খোদ পশ্চিমবঙ্গেই বিতর্ক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যুক্ত রাজাকার-আলবদরদের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে ঢাকার শাহবাগে আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনের বিরোধিতা করে কলকাতায় বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করার অভিযোগ রয়েছে এই সংগঠনের অনেক নেতার বিরুদ্ধে।

তবে কামরুজ্জামান বলছেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের শাস্তির বিরোধী নন তারা। শুধুমাত্র মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর শাস্তির বিরোধিতা করেছিলেন তারা।

তিনি দাবি করেন, "বঙ্গবন্ধুর মূর্তি সারানোর দাবির সঙ্গে কেউ কেউ আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সঙ্গে মিলিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন। সেটা ঠিক নয়। বঙ্গবন্ধুকেও আমরা সবাই শ্রদ্ধা করি।"

আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারত সফরে যাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঠিক এই সময়ে এ ধরণের একটি দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা জানতে চাইলে কামরুজ্জামান বলেন, "বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সঙ্গে এই দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।"

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ৮ নম্বর স্মিথ রোডে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবাসিক হল বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মণি। এর কিছুদিন আগে বেকার হোস্টেলের দু'টি কক্ষকে (২৩ এবং ২৪ নম্বর) 'বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ' হিসাবে রাজ্য সরকার স্বীকৃতি দেয়। ওই স্মৃতি কক্ষে বঙ্গবন্ধু ছাত্র থাকাকালীন সময়ে যে চেয়ার, চৌকি ও টেবিলে পড়াশোনা করতেন, সেসব সংরক্ষণ করা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু পড়তেন এমন কিছু পাঠ্য পুস্তকও সেখানে রাখা হয়েছে।

এদিকে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানোর দাবির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে কলকাতার 'ভাষা ও চেতনা সমিতি'। কলকাতার প্রভাবশালী এই সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি সরানোর দাবির তীব্র নিন্দা ও এর বিরোধিতা করার কথা জানানো হয়েছে। তারা মনে করে, বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বাঙালি জাতির সম্পদ। তাই তার এই আবক্ষ মূর্তি সরানোর দাবি পুরোপুরি রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক।

সংগঠনের সম্পাদক ইমানুল হক প্রশ্ন তোলেন, যারা এই দাবি করলেন, তারা কি টেলিভিশনের কোনও ছবি দেখেন না, ফেসবুক-হোটাসঅ্যাপ চালান না, নিজেদের ছবি তুলে কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেন না?

ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনটির ওই নেতা আরও বলেন, আমরা আর কিছুদিন দেখবো, এরপরও ওরা যদি দাবি প্রত্যাহার না করে তবে আমরাও রাস্তায় নেমে এই দাবির বিরোধিতা করবো।

ইমানুল হক জানান, সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামানের কাছে আমরা এই দাবি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছি। তিনি যদি তার দাবি থেকে সরে না আসেন, তো আমরা আমাদের মতো গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করবো।

ভাষা ও চেতনা সমিতির নেতা ইমানুল মনে করেন, শাহবাগ আন্দোলনের সময়ও সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন বিরোধিতা করেছিল। এমনকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াতেও তাদের তীব্র বিরোধিতার সাক্ষী কলকাতার মানুষ।

প্রসঙ্গত, শাহবাগ আন্দোলনের সময় 'ভাষা ও চেতনা সমিতি' আন্দোলনের পক্ষে কলকাতায় বেশ কিছুদিন মিছিল সমাবেশ করেছে। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বিশ্ব গড়ার ডাকে পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনটি বরাবরই সরব ভূমিকা নিয়েছে।

সূত্র: দি ডেইলি স্টার 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত