লণ্ডন প্রতিনিধি

০৮ মে, ২০১৫ ০২:১৯

এগিয়ে আছেন তিন বাংলাদেশি রুশনারা, টিউলিপ ও রূপা

শেষ হলো ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচন পরবর্তী জরিপে কোয়ালিশন সরকারের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এককভাবে সরকার গঠনের জন্যে কোন দলই প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন পাবে না।আজ লন্ডন সময় দুপুর ১টার (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা) মধ্যে চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে।

কারা সরকার গঠন করছে কনসারভেটিভ, নাকি লেবার পার্টি বাংলাদেশি কমিউনিটিতে সে আলোচনার চাইতে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে রুশনারা, টিউলিপ এবং রূপাকে নিয়ে। এবার রেকর্ড সংখ্যক ১১ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী থাকলেও এ তিনজনের জয়লাভের সম্ভাবনাই উজ্জ্বল বলেছে বিভিন্ন জনমত জরিপ, সে হিসেবে তারা আলোচনায়।

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সারা দেশের বাঙালি ভোটাররা তাদের নিজ নিজ টাউনের ২২টি আসনের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন। তাদের ভোটে ওইসব আসনে এমপিরা বিজয়ী হয়ে থাকে।


ব্রিটিশদের পাশাপাশি সাধারণ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরাও। সকাল থেকেই লন্ডন ও আশপাশের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন বাংলাদেশী কমিউনিটির লোকজন। তাদের আশা ক্ষমতায় যেই আসুক, প্রবাসীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নতুন সরকারের কাছে গুরুত্ব পাবে।


বাঙালি ভোটাররা পুরো ৬ সপ্তাহ নিজ নিজ এলাকার এমপিদের জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। শ্বেতাঙ্গ এমপি প্রার্থীদের ৮৯% ভাগই বাঙালিদের কোনো না কোনো রেস্টুরেন্টে নিয়মিত ‘ভাত-তরকারি’ খেতে আসেন। বাঙালিরা সব দলের পক্ষেই নিজেদের পছন্দ মতো প্রচারণা চালিয়েছেন।


এদিকে বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেট এলাকায় লেবার পার্টি এমপি প্রার্থী রুশনারা আলীর পক্ষে বিপুলসংখ্যক ভোটার ভোট প্রদানে টাওয়ার হ্যামলেটের সেন্টারগুলোতে জড়ো হন। এ আসনে তিনি এগিয়ে রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।


হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে টিউলিপ সিদ্দিকের পক্ষে বাঙালিরা ব্যাপকভারে ভোট প্রদান করেছেন। সেখানে ৪২ ভোটের ব্যবধানে বিগত পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টির এমপি জয়ী হয়েছিলেন। বাঙালিদের অংশগ্রহণ এবং তার ব্যাপক প্রচারণা আসনটিতে টিউলিপের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে দিয়েছে।


যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচনে এমপি পদের জন্য লেবার দলের হয়ে লড়ছেন তিন বাংলাদেশী কন্যা রুশনারা আলী, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ও রূপা আশা হক। লর্ড অ্যাশক্রফট পরিচালিত আসনভিত্তিক জরিপে তিনজনই ভোটের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।


গতবারের নির্বাচনে (২০১০ সাল) জয়ী হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি হন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী। তার বিজয়ের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশীদের অভিষেক ঘটে। জরিপের ফলে রুশনারার পাশাপাশি এবার এগিয়ে রয়েছেন টিউলিপ ও রূপা।


সাম্প্রতিক এই জরিপের পর্যালোচনা করে ‘লর্ড অ্যাশক্রফট পোলস’ বলছে আগের ফলাফলের তেমন একটা বদল হয়নি।
রুশনারা সিলেটি কন্যা। জন্ম বিশ্বনাথে। গতবার পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে প্রায় ১২ হাজার ভোট বেশি পেয়ে তিনি বিজয়ী হন। এবারও একই আসনে লড়ছেন তিনি। এবার বড় ব্যবধানে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে তার।


আসনভিত্তিক জরিপে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে টিউলিপ এবং লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে রূপা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে বেশি ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।


লন্ডনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ১০টি আসনের শীর্ষে রয়েছে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন। আসনটিতে ২৩ বছর ধরে টানা এমপি ছিলেন লেবার দলের অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী গ্লেন্ডা জ্যাকসন। ২০১০ সালের নির্বাচনে মাত্র ৪২ ভোটের ব্যবধানে তিনি জিতেছিলেন। ওই নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোটের ব্যবধানে ফল নির্ধারণের আসন ছিল এটি। এ কারণে এবার আসনটি পেতে মরিয়া কনজারভেটিভ দল। আসনটিতে দখল রাখতে চান লেবার দলের নতুন প্রার্থী টিউলিপ।


টিউলিপ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে। জরিপে টিউলিপ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কনজারভেটিভ দলের সায়মন মার্কাসের চেয়ে ১৭ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।


লন্ডনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসন ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকট। এ আসনে গতবার তিন হাজার ৭১৬ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন কনজারভেটিভ-দলীয় প্রার্থী এঞ্জি ব্রে। ২০১০ সালের নির্বাচনে এঞ্জি ব্রে পেয়েছিলেন ১৭ হাজার ৯৪৪ ভোট। ১৪ হাজার ২২৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন লেবার দলের প্রার্থী। এবার এঞ্জি ব্রের সঙ্গে লেবার দলের হয়ে লড়ছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রূপা হক। লর্ড অ্যাশক্রফটের জরিপে এ আসনে রূপা হক ৬ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।


রূপা কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আদি বাড়ি পাবনায়। এবার যুক্তরাজ্যের প্রধান তিনটি দল থেকে মোট ১১ জন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী এমপি পদে লড়ছেন। তাদের মধ্যে লেবার দল থেকে সাতজন, লিবারেল ডেমোক্র্যাট দল থেকে তিনজন এবং কনজারভেটিভ দল থেকে একজন মনোনয়ন পেয়েছেন। শেষ মুহুর্তে লেবার পার্টির প্রার্থী তালিকা থেকে সুমন হককে বাদ দেওয়া হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত