সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ নভেম্বর, ২০১৭ ০২:০৪

আবারও রোহিঙ্গা নাম মুখে আনলেন না পোপ ফ্রান্সিস

রোমান ক্যাথলিকদের শীর্ষ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমার সফরে জনসমক্ষে দেওয়া ভাষণে ফের রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ করেন নি। এরআগে তিনি দেশটির শীর্ষনেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠকের পর বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে রোহিঙ্গা শব্দটি এড়িয়ে গিয়েছিলেন।

তার এই সফরের ঠিক আগেই নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সফরের আগে মানবাধিকার সংগঠনগুলো মিয়ানমারের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থনের প্রকাশ হিসেবে পোপকে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি বলার আহ্বান জানিয়েছিল।

কিন্তু এই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নিজেদের নাগরিক এমনকি রোহিঙ্গা হিসেবেও মানতে নারাজ মিয়ানমারের নেত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর পোপও নামটি এড়িয়ে যান।

বিবিসি জানিয়েছে, বাংলাদেশে আসার আগের দিন বুধবার ইয়াঙ্গুনে দেড় লাখ মানুষের সামনে এসে ভাষণেও পোপ ফ্রান্সিস রোহিঙ্গা নামটি নেননি।

রোহিঙ্গা নাম না নিলেও মিয়ানমারের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রতি নিজের সমর্থনের কথা প্রকাশ করেছেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু। সেই সঙ্গে প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পোপ বলেন, এটা ‘যীশুর পথ নয়’।

বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারের ক্যাথলিকদের প্রতিনিধিরাই পোপকে ‘স্পর্শকাতর’ রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাদের শঙ্কা এতে দেশটির সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাদের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হবে এবং দেশটির ৬ লাখ ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের জীবন-যাপন সমস্যার মধ্যে পড়বে।

মিয়ানমারের ৯০ শতাংশ ক্যাথলিকই বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর; পোপের ভাষণ শুনতে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে তারা ইয়াঙ্গুনের কেইকাসান পার্কে হাজির হন। ভাষণে পোপ মিয়ানমারে জাতিগত সংঘাত ও নিপীড়নের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন,“আমি জানি, মিয়ানমারের অনেকে সহিংসতার ক্ষত নিয়ে আছে, কারোটা দেখা যাচ্ছে, কারোটা দেখা যাচ্ছে না।

“এটা মনেই হতে পারে, এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাগ ও প্রতিশোধ থেকে; যদিও প্রতিশোধ যীশুর পথ নয়।”

খ্রিস্টান সমাবেশের পর বুধবার মিয়ানমারের শীর্ষস্থানীয় বৌদ্ধ সন্যাসীকেও সাক্ষাৎ দেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু। তিনি তাদের বলেন, “যদি ঐক্যবদ্ধ থাকাটা আমাদের লক্ষ্য হয়, তবে আমাদের সব ধরনের ভুল বোঝাবুঝি, অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা ও কুসংস্কার জয় করতে হবে।”

মিয়ানমারের সর্বোচ্চ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংঘ মহানায়কের চেয়ারম্যান জবাবে পোপকে বলেন, তারা ধর্মের নামে উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানান।

মিয়ানমার সফরে রোহিঙ্গা নামটি উচ্চারণ না করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনা নিয়েই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে পৌঁছাচ্ছেন পোপ ফ্রান্সিস, যেখানে ৬ লাখের বেশি শরণার্থী এসেছে গত ৩ মাসে।

পোপ ফ্রান্সিসের ঢাকা সফরসূচিতে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন নেই। তবে কক্সবাজার থেকে কয়েকজন রোহিঙ্গাকে ঢাকায় এনে পোপের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হবে বলে বাংলাদেশের ক্যাথলিক নেতারা জানিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত