২০ জুলাই, ২০১৮ ০২:৩৩
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’কে হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক নাইমুর জাকারিয়া রহমানকে (২০) দোষী সাব্যস্ত করেছে দেশটির আদালত।
নাইমুর প্রধানমন্ত্রীর ডাউনিং স্ট্রিট অফিসে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভেতরে ঢুকে থেরেসা মেকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।
বুধবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করে লন্ডনের ওল্ড বেইলি আদালত। নাইমুরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে বলে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের অশালীন ছবি পাঠানোর সন্দেহে গত বছরের আগস্ট মাসে নাইমুরকে আটক করে পুলিশ। সে সময় মোবাইল ফোন পরীক্ষায় ধর্মীয় উগ্রবাদীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত পেয়ে তার পিছু নেন কর্মকর্তারা।
এরপর লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ফাইভের সন্ত্রাস দমন কর্মকর্তাদের একটি ছদ্মবেশি অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠেন নাইমুর। ব্রিটেনে হামলা চালানোর জন্য তিনি ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তবে তিনি মূলত ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য ভেবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছিলেন।
নাইমুর উত্তর লন্ডনে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। জঙ্গি ছদ্মবেশে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক এবং তাদের কাছ থেকে নকল সুইসাইড ভেস্ট ও বোমা নেওয়ার পর গত বছরের ২৮ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুনানির মধ্যে ইমরানকে লিবিয়ায় ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যোগদানে সহায়তার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
আদালতে বলা হয়, সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেওয়া এক চাচার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নাইমুরের। ওই চাচাই তাকে ব্রিটেনে হামলা চালানোর জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। সিরিয়ায় ড্রোন হামলায় চাচার মৃত্যুর পর এই পরিকল্পনা নিয়ে এগোন নাইমুর।
আইএস সদস্য পরিচয় দেওয়া এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার কাছে টেলিগ্রাম অ্যাপে নাইমুরের পাঠানো বিভিন্ন মেসেজ পড়া হয় আদালতে। গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি লেখেন, “আপনি কি আমাকে স্লিপার সেল এএসএপিতে নিতে পারেন? আমি পার্লামেন্টে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাতে চাই। আমি থেরেসা মেকে মারার একটি চেষ্টা করতে চাই।”
পরদিন তিনি লেখেন, “আমার লক্ষ্য টার্গেটকে ধরা। পার্লামেন্টের নেতাদের মৃত্যুর চেয়ে ছোটখাটো কিছু নয়।”
হামলা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নাইমুর গত নভেম্বরে হোয়াইট হলের আশপাশ ঘুরে দেখেন এবং বিস্ফোরক নিতে যুতসই মনে করে একটি ব্যাগ তিনি ছদ্মবেশি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দেন।
গত বছরের ২৮ নভেম্বর ওই পুলিশ কর্মকর্তা নকল বিস্ফোরক ভরে ওই ব্যাগ ও একটি জ্যাকেট নাইমুরকে দিয়ে বলেন, এখন তিনি এগিয়ে যেতে পারেন। কেনসিংটনের ওই জায়গা থেকে হাঁটা শুরু করার পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
আরেকটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনায় মোহাম্মদ আকিব ইমরান নামের এক ব্যক্তিকে সহায়তার অভিযোগও রয়েছে নাইমুরের বিরুদ্ধে। ২১ বছর বয়সী মোহাম্মদ আকিব ইমরান পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। নাইমুরকে গ্রেপ্তারের সময় আকিবকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
আপনার মন্তব্য