নিউজ ডেস্ক

২১ জানুয়ারি, ২০১৫ ২৩:২০

"দ্য বিস্ট" নিয়েই ভারত আসছেন ওবামা

গাড়ি নয়, আস্ত একটি ট্যাঙ্ক! "দ্যা বিস্ট" নামক সেই গাড়ি নিয়েই ভারত আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ।

ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে আগামী শনিবার ভারত সফরে আসছেন সস্ত্রীক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সঙ্গে নিয়ে আসছেন তাঁর নিজস্ব বিশাল নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের বিশেষ দল, যারা সর্বক্ষণ তাঁকে ঘিরে থাকবে। সেই দলে রয়েছে ওবামার নিজস্ব গাড়িও।

শুধু গাড়ি বললে একটু ভুল হবে। ‘দ্য বিস্ট’ কোড নেমের ওই গাড়ি আক্ষরিক অর্থেই বিস্ট-ই বটে! গাড়ির অন্তঃসজ্জা থেকে শুরু করে নিরাপত্তা ও যোগাযোগ-ব্যবস্থা প্রত্যেকটা জিনিসই অত্যাধুনিক। যার জন্য বিস্ট-কে বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত গাড়ির আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক মার্কিন প্রেসিডেনশিয়াল গাড়িতে কী কী আছে—

কালো রঙের লিমুজিন-ঘরানার গাড়িটির নির্মাতা জেনারেল মোটর্স। পোশাকি নাম দ্য বিস্ট হলেও অনেক সময়ে তাকে ‘ক্যাডিলাক ওয়ান’ বা ‘লিমো ওয়ান’ বলে ডাকা হয়। ক্যাডিলাক মডেলের চিহ্ন বহন করলেও গাড়িটির বহু অংশই শেভ্রলে কোডিয়াক ট্রাকের থেকে নেওয়া।

গাড়িটি স্টীল, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটেনিয়াম ও সেরামিক দিয়ে তৈরি। দরজায় আট-ইঞ্চি পুরু স্টীল প্লেটের বর্ম রয়েছে (যেমনটি যুদ্ধের ট্যাঙ্কে থাকে) যা বুলেট থেকে রকেট, আইইডি হামলা-- সব প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এমনকী, জানলার কাচও পাঁচ-ইঞ্চি পুরু বহুস্তরীয়। ফলে, স্টীলের বর্ম ও কাচ মিলিয়ে বিস্টের দরজার ওজন আর একটি বোয়িং ৭৫৭ বিমানের দরজার ওজন প্রায় সমান। চালকের দরজার কাচ ছাড়া আর কোনও জানলা খোলা যায় না। ফলে, রাসায়নিক ও জৈবিক হামলা হলেও প্রেসিডেন্ট অক্ষত থাকবেন।

গাড়ির স্যাসির ওজন প্রায় ৬,৩৫০ কিলোগ্রাম। পুরো গাড়ির ওজন প্রায় ৮ টন। তুলনায় রোলস রয়েস ফ্যান্টম-এর (বিশ্বের অন্যতম বৃহত্ গাড়ির মডেল) স্যাসির ওজন মাত্র ২,৫৫০ কেজি। ফলে গাড়ি না বলে একে ট্যাঙ্ক বলাই উচিত।

শুধু গাড়ির স্যাসিই নয়, তার তেলের ট্যাঙ্কও আর্মার-দিয়ে মোড়া. যাতে তাকে তাক করে কোনও হামলা না হয়। পাশাপাশি, ফুয়েল ট্যাঙ্ককে মুড়ে থাকে একটি ফোমের জ্যাকেট। যাতে কোনও কারণে আগুন ধরে গেলেও তেলের ট্যাঙ্কে কোনও বিস্ফোরণ ঘটবে না।বিস্টের পুরো গাড়ি যেখানে অত্যাধুনিক, সেখানে চাকাই বা বাদ যাবে কেন! গাড়ির চাকাগুলি কেভলার (বুলেটপ্রুফ)দিয়ে মোড়া। ফলে কোনওভাবে তাতে ফুটো হবে না, বা হাওয়া বের হবে না। যদিও বা কোনওভাবে সেরকম পরিস্থিতি হয়ও, বা চাকার রবার খুলে গেলেও, তার স্টীলের রিমের সাহায্যেই প্রেসিডেন্টের গাড়ি দিব্যি দৌড়বে।

গাড়ির ডিকিতে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার জন্য সমস্ত উপকরণই মজুত থাকে। যেমন টিয়ার গ্যাস, শটগান। রয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার, প্রেসিডেন্টের রক্তের গ্রুপের মানানসই রক্তের পাউচ, আপত্কালীন মেডিক্যাল কিট, নিজস্ব অত্যাধুনিক অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা – যেমন দেখা যায় জেমস বন্ডের ছবিতে।

গাড়ির চালকের আসনে থাকেন ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের অফিসার। যিনি এই গাড়ি চালাতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ওই বিশাল ও ভারি গাড়ির মুখকে মুহূর্তের মধ্যে উল্টো অভিমুখে ঘোরাতে তিনি সিদ্ধহস্ত। চালকের সুবিধের জন্য গাড়িতে রয়েছে নাইট-ভিসন ক্যামেরা, ইনফ্রা-রেড সেন্সর। ফলে, নিকষ আঁধার হোক বা ধোঁয়ায় ভরা পরিবেশ—কোনও পরিস্থিতিতেই গাড়ি চালাতে অসুবিধে হবে না।

গাড়িতে রয়েছে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিস্টে রয়েছে বিশেষ জিপিএস প্রযুক্তি, ওয়াই-ফাই ও স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে যে কোনও সময়ে গাড়ি থেকেই ভাইস-প্রেসিডেন্ট, পেন্টাগন, সামরিক কর্তা ও বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে ‘পোটাস’ বা ‘ইগল’ (মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এই কোডনামেই ডাকা হয়) যোগাযোগ বজায় রাখতে পারেন।

এহেন একটি গাড়ি তৈরি করতে খরচ পড়ে প্রায় ১৫ লক্ষ মার্কিন ডলার ( প্রায় ১২ কোটি টাকা)। তবে, সব ভাল হলেও বিস্টের অপারগতা এক জায়গাতেই, তা হল এই গাড়ি বেশি উচ্চগতি তুলতে পারে না। সুপারচার্জার থাকা সত্ত্বেও এত ভারি গাড়ি ঘণ্টায় ৬০ মাইলের বেশি গতি তুলতে অক্ষম। শুধু তাই নয়, এই গাড়ির তেল খরচও যথেষ্ট। গড়ে ৩ লিটারে এক কিলোমিটার। তবে, গাড়ির সওয়ারির নাম যখন বারাক  ওবামা, সেখানে তেলের খরচ কম হল না বেশি, তাতে কী-ই বা এসে যায়!



আপনার মন্তব্য

আলোচিত