ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১৮ আগস্ট, ২০১৫ ০৩:৫৫

শ্রীলংকায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সমাপ্ত, ক্ষমতায় ফিরছেন রাজাপাকসে!

শ্রীলংকায় শান্তিপূর্ণভাবে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৭ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচনের ফল প্রকাশ হবে আজ মঙ্গলবার।

এই ভোটে ক্ষমতাসীন ইউএনপি ও পরাজিত প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের ইউপিএফএ জোটের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সকালে ভোট দেওয়ার পর রাজাপাকসে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি পুনর্নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী।

পর্যবেক্ষকরা জানান, কোথাও কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। কয়েক মাস আগে ক্ষমতা হারানো সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে এ নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসবেন বলে দৃঢ় আশা পোষণ করছেন।

সাবেক প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র বলেন, এ ভোট হলো এমন এক ভোট, যাতে প্রমাণ হয়ে যাবে জনগণ রাজাপাকসেকে ফের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চান কি-চান না। খবর এএফপি, আলজাজিরা, বিবিসি ও রয়টার্সের।

প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা হুমকি দিয়ে বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসতে যাতে না পারেন, সে ব্যাপারে তার সব নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। তবে রাজাপাকসে তার জনপ্রিয়তা দিয়ে প্রেসিডেন্টের সব প্রচেষ্টা ধূলিসাৎ করে দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিশ্লেষকদের ধারণা, রাজাপাকসের আশা সফল নাও হতে পারে। কারণ সাধারণ নির্বাচনে কোনো দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, এমন লক্ষণ দেখছেন না তারা।

এদিকে সিরিসেনা চাইছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টিই (ইউএনপি) আগামী সরকার গঠন করুক। এ ব্যাপারে তাদের সাহায্য করতে পারে রাজাপাকসের প্রতি বিরূপ তামিল ও মুসলিম সংখ্যালঘু দলগুলো।

সিরিসেনা নিজে অবশ্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ইউপিএফএর সিনিয়র সদস্য এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। এখনও তিনি দলটির নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে সংসদ নির্বাচনে রাজাপাকসের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে তার অনীহা দেখে মনে হয়, দলের মধ্যে তার নিয়ন্ত্রণ কিছুটা হলেও নড়বড়ে। আর তার এই আগাম নির্বাচন দেওয়ার পেছনে যে উদ্দেশ্য কাজ করছে, সেটা হলো সংসদে রাজাপাকসেপন্থি সদস্যদের প্রভাব কমানো।

সোমবারের নির্বাচন উপলক্ষে দেশজুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশের মহাপরিদর্শক এনকে ইলানগাকুন বলেন, বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র এবং গণনাকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার জন্য দেশজুড়ে পুলিশের ৭৪ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়।

ভোটগ্রহণের দিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৭০ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, যা ২০১০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের চেয়ে বেশি। তবে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৮১ শতাংশ ভোট পড়ে।

বর্তমান ক্ষমতাসীন পক্ষ নাকি রাজাপাকসে, কোন পক্ষে ঝুঁকবে শ্রীলংকা? আজ মঙ্গলবারই এ প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবার শাসনক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন।

৩৭ বছরের তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াই অবসানে সাফল্যের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনও রাজাপাকসের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তবে ব্যাপক স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ও ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে তিনি সরকারি বিভিন্ন পদে নিজের আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠদের বসিয়েছেন- এমন অভিযোগে তার জনপ্রিয়তা কমে যায়।

নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে রোববার রাজাপাকসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পাঁচ পৃষ্ঠার একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত