আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২০ এপ্রিল, ২০২০ ২২:৩৭

করোনাযুদ্ধে বিশ্বের আদর্শ নেতা নিউজিল্যান্ডের জ্যাসিন্ডা

বিশ্ব থেকে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরা নিয়েছেন নানা পরিকল্পনা। তবে করোনাভাইরাসকে হারানোর এই যুদ্ধে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা অ্যার্ডেন। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনে তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে উপযোগী নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

৩৯ বছর বয়সী এই নেতা দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে জনগণের ওপর কোনোকিছু চাপিয়ে দেয়ার পরিবর্তে তাদেরকে নিজেদের সুরক্ষার বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তার বক্তব্য সহজ ও সুস্পষ্ট। আর এ জন্যই নিউজিল্যান্ডের সব শ্রেণির জনগণ প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা মেনে চলছেন।

নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক বলেন, মানুষ বিশ্বাস করে, জ্যাসিন্ডা কারও কাছে কোনোকিছু প্রচার করতে চাইছে না। সবাই এখন এক ধরনের বিপদের মধ্যে আছে। আর প্রধানমন্ত্রী নিউজিল্যান্ডবাসীর পাশে আছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জনগণের সম্পূর্ণ আস্থা আছে।

অন্য দেশের সরকারপ্রধানরা যখন প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করে কিংবা টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ রেখে সবাইকে মহামারি সম্পর্কে বোঝাতে চেষ্টা করছেন, তখন ভিন্ন পথে হেঁটেছেন জ্যাসিন্ডা অ্যার্ডেন। কোনও ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই তিনি বেশ কয়েকবার ফেসবুক লাইভে এসেছেন।

ফেসবুক লাইভে জনগণের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেন তিনি। লকডাউনের জন্য জনগণের অসুবিধা হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি এজন্য তাদের বোঝান যে, করোনাযুদ্ধ জয় করতে হলে সবাইকে একসঙ্গে লড়তে হবে।

লকডাউনের গাইডলাইন তিনি খুব সহজ ভাষায় মানুষকে বুঝিয়েছেন। বলেছেন নিজেকে একটি বাবলের মধ্যে রাখুন। পরিবারের সদস্য, অফিস সহকর্মী কিংবা যাদের ছাড়া আপনার চলবেই না তাদেরকে সেই বাবলের ভেতরে রেখে অন্য সব মানুষ থেকে দূরে থাকুন। এমন আচরণ করুন যেন আপনি ইতোমধ্যেই ভাইরাসে আক্রান্ত। তাই হাতেগোনা মানুষ ছাড়া বাবলের বাইরের কারও সঙ্গে মিশবেন না। বাবলের বাইরে গেলে আপনি বাকিদের মধ্যেও সংক্রমণ ঘটাবেন। তাই প্রিয়জনদের সুরক্ষার জন্য ঘরে থাকুন।’

ফেসবুক লাইভে এসে তিনি তার নিজের বাবল সম্পর্কে সবাইকে জানান। তার বাবলে থাকা অফিস কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের দেখান।

শিশুদের প্রতি অধিক সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, আমি জানি, শিশুদের খেলার মাঠ থেকে দূরে রাখা বেশ কঠিন। কিন্তু ভাইরাসটি কঠিন পৃষ্ঠে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরা করোনার বিরুদ্ধে লড়তে একেক ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল বিজ্ঞানের ওপর আস্থা রেখেছেন। অন্যদিকে, বিজ্ঞানকে উড়িয়ে দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ার বোলসোনারো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলনে দোষারোপের নতুন নতুন পদ্ধতি খুঁজে নিচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন না করলেও ১৩০ কোটি মানুষকে লকডাউন করে রেখেছেন।

জ্যাসিন্ডা সম্পর্কে ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষক ভ্যান জ্যাকসন বলেন, তিনি কখনও ভুল তথ্য দেন না। কাউকে দোষারোপও করেন না। তিনি জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। সবার প্রত্যাশা পূরণের জন্য তিনি নিরলসভাবে কাজ করার চেষ্টা করছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত