আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৯ মে, ২০২০ ২৩:৫৯

লকডাউনে ইউরোপে কমবে জন্মহার, গবেষণার দাবি

করোনা পরিস্থিতিতে সার্বিক অনিশ্চয়তার কারণে সন্তানধারণের পরিকল্পনা বাতিল করছেন বহু ইউরোপীয় দম্পতি। সম্প্রতি জার্নাল অব সাইকোসোমাটিক অবস্টেট্রিকস এবং গাইনিকোলজি সাময়িকীতে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য-উপাত্ত দেয়া হয়েছে।

ওই গবেষকরা দাবি করছেন, ইতালিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে ১,৪৮২ জনের উপরে একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ৮০ শতাংশের বেশি দম্পতি সন্তানধারণের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। আর্থিক অনিশ্চয়তাকেই এর অন্যমত কারণ বলে উল্লেখ করছেন।

যদিও জাতিসংঘের সমীক্ষা বলছে, করোনাকালে অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের হার বাড়বে। তাছাড়া এ বছর মার্চ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে জন্ম নেবে ১১ কোটি ৬০ লাখ শিশু। এতে শীর্ষে থাকবে ভারত।

বিজ্ঞাপন

তবে ইউরোপের চিত্র ভিন্ন হবে বলে মনে হচ্ছে। মহামারীকালে ইতালিতে সন্তান নেয়ার আগ্রহ যাচাইয়ে দম্পতিদের ওপর জরিপ পরিচালনা করেন একদল বিশেষজ্ঞ। ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরেন্সের গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণায় ১ হাজার ৪৮২ জনের অনলাইন ইন্টারভিউ নেয়া হয়। সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তারা উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ১ হাজার ২১৪ জনই অর্থাৎ ৮১ দশমিক ৯ শতাংশই মহামারী চলাকালীন সন্তান নিতে অনিচ্ছুক।

এছাড়া ২৬৮ জন অংশগ্রহণকারী যারা মহামারী শুরুর আগে সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বেশি (৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ) সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন।

মহামারীর সময় দম্পতিদের সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা বাদ দেয়ার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। সাক্ষাৎকারে অংশ নেয়া ৫৮ শতাংশই অর্থনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আর ৫৮ শতাংশ কভিড-১৯ এর কারণে গর্ভধারণে ফলে উদ্ভূত সম্ভাব্য সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

ইতালিতে লকডাউনের তৃতীয় সপ্তাহে এই জরিপটি চালানো হয়। এতে ১৮-৪৬ বছর বয়সী ৯৪৪ জন নারী এবং ৫৩৮ জন পুরুষ অংশ নেন। বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে কমপক্ষে ১২ মাস ধরে একসঙ্গে থাকছেন শুধু এমন লোককেই এ জরিপের জন্য বেছে নেয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

এই গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ড. এলিজাবেতা মিসেল্লি বলেন, লকডাউনে মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই অনেক মানুষ সন্তান নিতে অনাগ্রহী।

বেশিরভাগ মানুষ মহামারীর সময় সন্তান নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও জরিপে অংশ নেয়া যে ২৬৮ জন আগেই সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন তাদের ৬০ শতাংশ এখনো সিদ্ধান্তে অটল আছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের সক্ষমতা যদি হারিয়ে যায় অর্থাৎ সম্ভাব্য বন্ধ্যাত্বের আশঙ্কায় তারা এই ঝুঁকির মধ্যেও সিদ্ধান্ত বদল করেননি।

অবশ্য ১৪০ জন অংশগ্রণকারী বা ১১ দশমিক ৫ শতাংশ লকডাউন শুরুর পর কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থাতে সন্তান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই ধরনের সিদ্ধান্ত বিশেষ করে নারীদের পক্ষ থেকে এসেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘অবস্থার পরিবর্তন হবে’ (৫০%) এই আশায় এবং এই মুহূর্তে ‘ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা দরকারি’ (৫০%) এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তারা সন্তান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ১৪০ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জন এর মধ্যে গর্ভধারণের চেষ্টা করেছেন।

সূত্র: মেডিক্যাল এক্সপ্রেস

আপনার মন্তব্য

আলোচিত