সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৬:৫১

ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত

যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও সাবেক সাংসদ আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া (৬৫) ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ গাইবান্ধার ছয় জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, অবৈধ আটক, অপহরণ, লুণ্ঠন ও নির্যাতনের ঘটনায় তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা।

অপর আসামিরা হলেন- মো. রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১), মো. আব্দুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), মো. নাজমুল হুদা (৬০) ও মো. আব্দুর রহিম মিঞা (৬২)। ছয় আসামির সবাই পলাতক রয়েছে।

দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডির কার্যালয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান ও জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক এম সানাউল হক। এ সময় এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেড এম আলতাফুর রহমান ও হেলাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

রোববারই তদন্ত প্রতিবেদনটি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেওয়া হবে। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) প্রস্তুত করে প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবে।

গত বছরের ২৬ অক্টোবর অক্টোবর এ ছয়জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। একবছরের বেশি সময় তদন্তের পর রোববার ছয় খণ্ড বিভক্ত ৮৭৮ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, মামলাতে ঘটনার সাক্ষী ২৫ ও জব্দ তালিকার সাক্ষী রয়েছেন তিন জন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৯ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বর্তমান গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় আসামিরা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করে।

ওই ছয় আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ২৩ নভেম্বর আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল তাদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গাইবান্ধা ও দিনাজপুর জেলা পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, আসামিদের কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

ছয় আসামির বিরুদ্ধে তিন অভিযোগ
প্রথম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ৯ অক্টোবর সকাল ৮টা বা সাড়ে ৮টার সময় আসামিরা পাকিস্তানের দখলদার সেনা বাহিনীর ২৫/৩০ জনকে সঙ্গে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন মৌজামালি বাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে চার জন নিরীহ, নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে আটক, নির্যাতন ও অপহরণ করে। পরে তাদের দাড়িয়াপুর ব্রীজে নিয়ে গিয়ে গনেশ চন্দ্র বর্মণের মাথার সঙ্গে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে এবং বাকিদের ছেড়ে দেয়। আসামিরা আটককৃতদের বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে।

দ্বিতীয় অভিযোগ অনুসারে, ওই দিন বিকাল ৪টার দিকে আসামিরা সুন্দরগঞ্জ থানার মাঠেরহাট ব্রীজ পাহারারত ছাত্রলীগের নেতা মো. বয়েজ উদ্দিনকে আটক করে মাঠেরহাটের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। পরদিন সকালে আসামিরা বয়েজকে থানা সদরের স্থাপিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তিন দিন আটক রেখে নির্যাতনের পর ১৩ অক্টোবর বিকালে তাকে গুলি করে হত্যা করে লাশ মাটির নিচে চাপা দেয়।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত আসামিরা পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সুন্দরগঞ্জ থানার পাঁচটি ইউনিয়নের নিরীহ-নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের ১৩ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অবৈধভাবে আটক করে। তাদের তিন দিন ধরে নির্যাতন করার পর পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পের কাছে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং তাদের লাশ মাটি চাপা দেয়। সেখানে ওই শহীদদের স্মৃরণে একটি বধ্যভূমি নির্মিত হয়েছে।

ছয় আসামি সংক্ষিপ্ত পরিচয়
সংবাদ সম্মেলনে জনানো হয়, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজ মিয়া ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চার দলীয় জোটের অধীনে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন।

২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাসহ ১৩টি মামলা হয়। ২০১৩ সালে সুন্দরগঞ্জ থানায় চার পুলিশ সদস্য হত্যামামলায় অন্যতম আসামি এই আজিজ।

বাকিদের মধ্যে জামায়াতের সুন্দরগঞ্জ থানা শাখার সক্রিয় সদস্য রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জুর (৬১) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দুটি মামলা হয়।

মো. আব্দুল লতিফ জামায়াতে ইসলামী সক্রিয় কর্মী এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ের নেতা। তার বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগসহ তিনটি মামলা হয়।

আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী মুক্তিযুদ্ধের আগে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সক্রিয় নেতা ছিলেন। পরে জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় কর্মী বলে সংবাদ সম্মেলনে সরবরাহ করা কাগজে বলা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়।

১৯৭০ সাল থেকে জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয়। তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে বিএনপির সক্রিয় কর্মী হলেও জামায়াতের সমর্থক করে বলে জানা যায়।

আর আব্দুর রহিম মিঞা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াতের কর্মী ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন- এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তার মানবতাবিরোধী অপরাধে দুটি মামলা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত