সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৫:৫৬

কবে হতে পারে নিজামীর ফাঁসি

মানবতাবিরোধী অপরাধে আগে কার্যকর হওয়া মৃত্যুদণ্ডগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে আড়াই থেকে ছয় মাসের মধ্যে কার্যকর হতে পারে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি। কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের রায়ের পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে সময় লেগেছে দুই মাস ২৫ দিন দিন, কামারুজ্জামানের জন্য ছয় মাস ৮ দিন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর তিন মাস ২৩ দিন এবং আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের লেগেছে পাঁচ মাস ছয় দিন।

তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে যদি খুব বেশি সময় না লাগে আর নিজামীর আইনজীবী রিভিউ আবেদন না করার যে ইঙ্গিত দিয়েছেন শেষ পর্যন্ত যদি তাই হয় তাহলে ফাঁসি কার্যকর হতে পারে তার আগে। আইনমন্ত্রীও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।

আপিল বিভাগ আজ মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখার পর শুরু হয়েছে ফাঁসি কার্যকরের সম্ভাব্য সময়ের হিসাব-নিকাশ।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম বলেন, আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন। এই মৃত্যুদণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শুধু মাত্র রিভিউ করার সুযোগ পাবেন। তিনি যদি রিভিউ আবেদন করেন তাহলে ওই রিভিউয়ের রায়ের পর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

আসামী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের ক্লায়েন্ট যদি রিভিউ করতে বলেন তবে অবশ্যই আমরা রিভিউ আবেদন করবো। এই মুহূর্তেই রিভিউ করবো কি না তা বলা যাচ্ছে না। কারণ নিজামী সাহেব ভাবতে পারেন পূর্ববর্তী যারা রিভিউ আবেদন করেছেন তাতে কোন ফলাফল হয় নাই। আর রিভিউ করে কি লাভ হবে!

‘এটা নির্ভর করছে আমাদের ক্লায়েন্টের উপর,’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন না করলে দ্রুতই নিজামীর ফাঁসি কার্যকরে ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকার।

আপিল বিভাগের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আইনমন্ত্রী বলেন, জাতি এই আদেশের অপেক্ষায় ছিলো।

রায়ের পর সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘নিজামীর মতো যুদ্ধাপরাধীরা যারা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার হচ্ছে। নিজামীর বিচারের রায় আমরা আজ পেয়েছি। এখন ইনশাআল্লাহ কার্যকর করার অপেক্ষায় থাকবো।’

তিনি জানান, আসামীপক্ষ রিভিউ আবেদন করলে এক ধরণের প্রক্রিয়া, আর না করলে লিখিত রায় প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই রায় কার্যকর করা হবে।

নিয়ম অনুযায়ী, আপিল বিভাগ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। সেটি হাতে পেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন ট্রাইব্যুনাল। সেই মৃত্যু পরোয়ানা ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনাবে কারা কর্তৃপক্ষ। পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবে আসামিপক্ষ। রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এবং তাতে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে আসামিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর পর সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি ফয়সালা হয়ে গেলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।

কামারুজ্জামান
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় কুখ্যাত গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সংগঠক মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখেন ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর। পরে রায় পুনর্বিবেচনার(রিভিউ) আবেদন হলে ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল তা খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এরপর ১১ এপ্রিল শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। আপিল বিভাগের রায়ের পর ৬ মাস ৮ দিন পর কার‌্যকর হয় তার ফাঁসির রায়।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধরী
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখেন ২৯ জুলাই, ২০১৫। এরপর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন হলে ১৮ নভেম্বর তা খারিজ হয়। পরে ২২ নভেম্বর রাতে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। আপিল বিভাগের রায়ের পর তিন মাস ২৩ দিন পর ফাঁসি কার্যকর হয় তার।

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখেন ১৬ জুন, ২০১৫। তিনি রিভিউ আবেদন করলে ১৮ নভেম্বর তা খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। পরে ২২ নভেম্বর রাতে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। আপিল বিভাগের রায়ের পাঁচ মাস ছয় দিন পর তার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

কাদের মোল্লা
মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের কর্মের জন্য ‘কসাই কাদের’ নামে পরিচিতি পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। আপিল বিভাগের রায়ের দুই মাস ২৫ দিন পর কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তবে সেসময় আইনে রিভিউয়ের সুযোগ না থাকলেও তিনি রিভিউ আবেদন করেছিলেন। ওই রিভিউ আবেদন বাতিল হওয়ার পরই কার্যকর হয় তার ফাঁসি।

সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন

আপনার মন্তব্য

আলোচিত