সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:৪৫

সাঈদীর যুদ্ধাপরাধ: ফাঁসির জন্যে রাষ্ট্রের প্রথম রিভিউ

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সর্বোচ্চ দণ্ডের (ফাঁসি) জন্য সর্বশেষ বিচারিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ। এটা ফাঁসি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম রিভিউ আবেদন। 

মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) আদালতের কাছে সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের পরিবর্তে ফাঁসির সাজা চেয়ে সর্বশেষ আবেদন করা হয়েছে। এরপর আর বিচারিক আর কোন প্রক্রিয়া বাকি নেই।

মানবতারিবোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে ফাঁসির সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করে। সে রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী আপিল করে। আপিলে আসামিপক্ষ খালাস চায়। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। অর্থাৎ মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সাঈদী কারাগারে থাকবেন।

আদালত সাঈদীর এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করে গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ সাঈদীর সাজা বৃদ্ধি চেয়ে সর্বশেষ আবেদন করে। আবেদনের পর অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, ‘একাত্তরে সাঈদী জনবিরোধী ছিলেন, সে সময় তিনি অনেক কু-কর্ম করেছেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, ‘ইব্রাহিম কুট্রি ও বিশা বালীকে হত্যা এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনেক দোকান-পাট লুট ও পোড়ানোর অভিযোগের বিষয় পুনঃর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছি। আশা করছি রিভিউ আবেদনে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে সাঈদীর।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেলাওয়ার হোসইন সাঈদীর রিভিউ আবেদন শুনানিতে বেঞ্চে কোন কোন বিচারপতি থাকবেন তা ঠিক করে দেবেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।’

তিনি বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী এ মামলার রায় আপিল বিভাগের যে বেঞ্চে ঘোষণা করা হয়েছে তারাই রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি করবেন। তবে সাঈদীর আপিলের রায় ঘোষণাকারী ৫ বিচারপতির মধ্যে ইতোমধ্যে ২ জন বিচারপতি অবসরে গেছেন।

রিভিউতে মূল ৩০ পৃষ্ঠার আবেদনের সঙ্গে মোট ৬শ’ ৫৩ পৃষ্ঠার নথিপত্র জমা দেয়া হয়েছে। যাতে পাঁচটি যুক্তি বা গ্রাউন্ড রয়েছে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদেস্যের আপিল বেঞ্চ সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে অমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা করেন। এখন ওই বেঞ্চের প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী অবসরে চলে গেছেন।’

বুধবার চেম্বার আদালতে সাঈদীর রায়ের রিভিউ উপস্থাপন করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বুধবার না করলেও বৃহস্পতিবার করা হতে পারে।’

মঙ্গলবার বিকেলে সাঈদীর আপিলের রায়ের পুনঃর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন দায়েরের পর তিনি নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ফাঁসির সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর সাঈদী আপিল করলে গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে যে রায় দেয়, তাতে সাঈদীর সাজা কমে আমৃত্যু সাজাভোগের রায় আসে।

সাঈদীর আপিলের রায়ে ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে হত্যা, নিপীড়ন, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরে বাধ্য করায় সাঈদীকে ‘আমৃত্যু’ কারাদণ্ড দেয়া হয়। আমৃত্যু কারাদণ্ড বলতে ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর সময় পর্যন্ত কারাবাস বোঝাবে।

এছাড়া ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৭ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ডের রায় দেয় আপিল বিভাগ।

এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসা বালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল।

আপিল বিভাগ থেকে এ পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার যে পাঁচটি রায় এসেছে, তার মধ্যে কেবল সাঈদীর ক্ষেত্রেই রিভিউ বাকি রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত