নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ মে, ২০১৬ ০১:২৮

যুদ্ধাপরাধী নিজামীর গ্রেপ্তার থেকে ফাঁসি

শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির নিজামী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত পঞ্চম যুদ্ধাপরাধী, বিচার শেষে যার সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর করা হল।

মঙ্গলবার দিনগত রাত বুধবার (১১ মে) রাত ১২:১০টার সময় কুখ্যাত এ যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

একাত্তরে জামায়াতে সিলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিমে আলা বা সভাপতি ছিলেন নিজামী। সেই সূত্রে তিনি ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আল বদর বাহিনীর প্রধান। তার পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্বেই যে বদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল তা মামলার বিচারে প্রমাণিত হয়েছে।

২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকা থেকে পুলিশ আটক করে। আটকের পর তাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। চার বছর পর ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর একাত্তরের হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাকে মৃতুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এই রায়ের আপিলের রায়েও ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্ট। রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনও বৃহস্পতিবার খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।

সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ থাকলেও নিজামী তা না করায় বুধবার প্রথম প্রহরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

বদর প্রধান নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারিক কার্যক্রমের ছয় বছরের পরিক্রমা

২০১০

  • ২৯ জুন: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মতিউর রহমান নিজামী গ্রেপ্তার হন।
  • ২ আগস্ট: একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

২০১১

  • ১১ ডিসেম্বর: নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন।

২০১২

  • ২৮ মে: বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, লুট, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ, তাতে উসকানি ও সহায়তা দেওয়া এবং পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের ১৬টি অপরাধে জামায়াত আমির নিজামীর বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়।
  • ২৬ অগাস্ট: বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর জবানবন্দির মধ্য দিয়ে নিজামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

২০১৩

  • ১৩ নভেম্বর: উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা যে কোনো দিন রায় ঘোষণার জন্য (সিএভি) রাখা হয়।
  • ৩১ ডিসেম্বর: রায় ঘোষণার আগে অবসরে যান ট্রাইব্যুনাল-১-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর৷

২০১৪

  • ২৩ ফেব্রুয়ারি: ৫৩ দিন পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান পদে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমকে নিয়োগ দেওয়া ও পরে ট্রাইব্যুনাল পুর্নগঠন করা হয়।
  • ২৫ ফেব্রুয়ারি: পুর্নগঠিত ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় নতুন করে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ১০ মার্চ দিন ঠিক করে।
  • ২৪ মার্চ: দ্বিতীয় দফায় সমাপনী যুক্তি শুনে পুর্নগঠিত ট্রাইব্যুনাল মামলাটিকে রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখে।
  • ২৪ জুন: তিন মাস পর রায় ঘোষণার জন্য মামলাটি ট্রাইব্যুনালের কার্যতালিকায় এলেও নিজামী হঠাৎ ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়ায় আসামির অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা যুক্তিসঙ্গত নয় বলে মামলাটি ফের রায়ের অপেক্ষায় রাখে আদালত।
  • ৩ জুলাই: কারা কর্তৃপক্ষ নিজামীর স্বাস্থ্য নিয়ে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন জমা দেয়।
  • ২৮ অক্টোবর: ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য ২৯ অক্টোবর দিন ঠিক করে।
  • ২৯ অক্টোবর: প্রসিকিউশনের আনা মানবতাবিরোধী ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল।
  • ২৩ নভেম্বর: ট্রাইব্যুনালের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন নিজামী। আপিলে ১৬৮টি যুক্তি তুলে ধরে সাজার আদেশ বাতিল করে খালাস চাওয়া হয়।

২০১৫

  • ৯ সেপ্টেম্বর: নিজামীর আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়।
  • ৮ ডিসেম্বর: দ্বাদশ দিনে শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি রায়ের দিন ঠিক করে দেয় আদালত।

২০১৬

  • ৬ জানুয়ারি: নিজামীর আপিল আংশিক মঞ্জুর করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
  • ১৫ মার্চ: সুপ্রিম কোর্ট নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার চূড়ান্ত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে। ওই দিনই রায়ের অনুলিপি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছার পর মৃত্যু পরোয়ানাও জারি হয়। পরদিন তা নিজামীকে পড়ে শোনানো হয়।
  • ২৯ মার্চ: যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে নিজামী।
  • ৩ মে: ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে ৫ মে চূড়ান্ত রায়ের দিন ঠিক করে আপিল বিভাগ।
  • ৫ মে: নিজামীর রিভিউ আবেদনে তুলে ধরা যুক্তির সারবত্তা (মেরিট) নেই বলে সর্বোচ্চ আদালত তা খারিজ করে দেয়।
  • ৮ মে: গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়।
  • ৯ মে: যুদ্ধাপরাধে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) খারিজের রায় প্রকাশ করা হয়।
  • ১০ মে: বুধবার মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত