সিলেটটুডে ডেস্ক

১৪ জুন, ২০২০ ১৭:৫৩

নাসিম ভাইকে সবসময় আমার পাশে পেয়েছি : প্রধানমন্ত্রী

ফাইল ছবি

মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনীতি করতে গিয়ে নাসিম ভাইকে সবসময় আমার পাশে পেয়েছি। রাজনীতিতে পাশে থেকে যারা সাহস ও সমর্থন দিয়েছেন, তারা একে একে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। নাসিম ভাইয়ের পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ ভাইও চলে গেলেন। এটা আমার জন্য খুবই দুঃখজনক।

রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। করোনা পরিস্থিতিতে গভীর শোকার্ত পরিবেশে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই বক্তৃতার সময় শোকে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, মাননীয় স্পিকার অত্যন্ত কষ্ট নিয়ে এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে মোহাম্মদ নাসিমের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে ১৪ দলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কারণ তিনি সকলকে নিয়ে চলতে পারতেন। শরিক দলের সদস্যরাও তাকে ভালো জানতেন। তিনি সফলতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে বিরাট ক্ষতি হয়েছে নিঃসন্দেহে। শেখ আব্দুল্লাহর মৃত্যুতেও যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০টা সাড়ে ১০টার দিকে শুনলাম আব্দুল্লাহ খুব অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। তার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে না নিয়ে নেয়া হলো সিএমএইচে। কিন্তু জাহাঙ্গীর গেট পার হতে না হতেই তার আরেকটা হার্ট অ্যাটাক হলো এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনটা অ্যাটাক। রাত ১১টা বাজে তখন খবর এলো তিনি নেই। এই যে একইদিনে দুজনের মৃত্যু আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের বাবা মো. মনসুর আলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে রাজনীতি করতেন। যখন ছোট ছিলাম সেই সময় মোহাম্মদ নাসিম ভাইয়ের সাথে আমাদের একটা পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। সব থেকে বড় কথা ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক যখন মোহাম্মদ নাসিমের বাবাকে ডেকে নিয়ে যায় মন্ত্রী হওয়ার জন্য, তখন তিনি বলেছিলেন- তুমি কী করে ভাবলে আমি তোমার মন্ত্রিসভায় আসব? তা কখনই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট আমাদের বাসায় আক্রমণ হয়েছে শুনে মনসুর আলী অনেক চেষ্টা করেছিলেন, এমনকি বাসা থেকে চলে গিয়েছিলেন কিছু করা যায় কিনা। যেহেতু মোশতাকের প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এ জন্য জাতীয় চার নেতার সাথে তাকেও কারাগারে হত্যা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোহাম্মদ নাসিম একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। আমি ’৮১ সালে দেশে ফেরার পর আমার একটা প্রচেষ্টা ছিল শহীদ পরিবারগুলোর ছেলেমেয়েদের নিয়ে আওয়ামী লীগকে আরও ঐক্যবদ্ধ করা। রাজনীতি করতে গিয়ে নাসিম ভাইকে সবসময় আমার পাশে পেয়েছি। এটা ঠিক যে চলার পথ এত সহজ ছিল না। সে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার পাশে থেকেছে, সমর্থন দিয়েছে।

তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে আমাদের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। মোহাম্মদ নাসিম অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। এ কারণে যেকোনো সময়, যেকোনো বিষয় মোকাবিলা করতে পারতেন। আর এই মোকাবিলা করতে গিয়ে তিনি নির্যাতিত হয়েছেন। জিয়াউর রহমানের আমলে যেমন তিনি নির্যাতিত হয়েছিলেন এরশাদের আমলেও সেভাবেই নির্যাতিত হয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এরশাদ ক্ষমতায় থাকার সময় মার্শাল ল’ জারির পরপরই সাভারে ফুল দেয়ার জন্য সেনারা তাদের হকিস্টিক দিয়ে প্রত্যেকের ওপর নির্যাতন করেছিল। অনেককেই সাভার থানায় নিয়ে বন্দি করে রাখা হয় সেই সময়। নাসিমও ঘাড়ে ও হাতে আঘাত পাযন। এরপর খালেদা জিয়ার আমলে অত্যাচারের সীমা নেই। এরপর এলো ওয়ান/ইলেভেন। তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো। সে সময় তার ব্রেইন স্ট্রোক করে। সেই সময় সে হাসপাতালে পৌঁছাতে পেরেছিল বলেই সে যাত্রায় নাসিম ভাই বেঁচে যান। তবে স্ট্রোক করার পর তার শরীরের একটা দিক প্যারালাইজড হয়ে যায়।

এই আলোচনায় আরও অংশ নেন বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আওয়ামী লীগের মতিয়া চৌধুরী, ডা. হাবিবে মিল্লাত ও মৃণাল কান্তি দাস, ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিতে শোকপ্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। এরপর এক মিনিট নীরবতা পালন ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এরপর দিনের অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত করে অধিবেশন মুলতবি করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত