১৫ জুন, ২০২০ ২২:৪৩
দ্য সিটি ও এবি ব্যাংকের পর এবার কর্মীদের গ্রস বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ কর্তন করলো এক্সিম ব্যাংক। একই সঙ্গে কর্মীদের পদোন্নতি ও ইনক্রিমেন্ট বন্ধেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটি। গতকাল এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার নিজেই এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সভায় ৪০ হাজার টাকার বেশি বেতন পান, এমন কর্মীদের বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীকালের মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন আকারে কর্মীদের জানানো হবে। চলমান সংকটে ব্যাংক বাঁচাতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে ব্যাংকারদের বেতন-কাঠামো এমনিতেই বেশি ছিল। ১৫ শতাংশ বেতন কমালে ব্যাংকারদের কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
নজরুল ইসলাম মজুমদার বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (বিএবি) এর চেয়ারম্যান। রোববার ব্যাংক কর্মীদের বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করে দেশের সব বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএবি। চিঠিতে কর্মীদের পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট, ইনসেন্টিভ বোনাস বন্ধ করাসহ ব্যাংক বাঁচাতে ১৩ দফা সুপারিশ করা হয়।
ব্যাংকগুলোতে চলমান নিয়োগসহ সকল নিয়োগ বন্ধ রাখার সুপারিশও করেছে বিএবি। এছাড়া নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং ও উপ-শাখা খোলা বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছে মো. নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন সংগঠনটি। চিঠি দেয়ার এক দিন পরেই নিজ ব্যাংকের (এক্সিম ব্যাংকের) কর্মীদের বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
বিএবি বলেছে, করোনাভাইরাস সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মী ছাটাই না করে ব্যাংককে সচল রাখার জন্য প্রস্তাবগুলো দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুপারিশ বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে বিএবি।
১৩ দফা সুপারিশ সম্বলিত চিঠিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আরও যেসব পরামর্শ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, সকল প্রকার স্থায়ী সম্পদ ক্রয় বন্ধ রাখা, কর্মীদের লোকাল ও বিদেশী প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা, সকল বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখা, সকল প্রকার সিএসআর, ডোনেশন, চ্যারিটি বন্ধ রাখা, পত্রিকা (প্রিন্ট ও অনলাইন) ও টেলিভিশনে সকল প্রকার বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখা, সকল কাস্টমার গেট-টুগেদার বন্ধ রাখা।
চিঠিতে বিএবি বলেছে, কর্মকর্তাদের গেট-টুগেদার ও ব্যবস্থাপক সম্মেলন বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে এসব সম্মেলন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে নিজস্ব পরিমণ্ডলে করতে হবে। এছাড়া বড় ধরনের ব্যয় (আইটি সম্পর্কিত, সফটওয়ার, হার্ডওয়ার ক্রয়) আপাতত সীমিত রাখা এবং অন্যান্য সকল ব্যয় কমিয়ে আনা।
চিঠি দেয়ার বিষয়ে নজরুল ইসলাম মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, বিএবি কোন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন নয়। আমরা বাস্তবতার নিরিখে ১৩ দফা সুপারিশ করেছি। এটি বাস্তবায়ন করা না করা ব্যাংকের নিজস্ব বিষয়। এক্ষেত্রে বিএবি কোন হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। যে যার সামর্থ্য ও প্রয়োজন অনুযায়ী উদ্যোগ নিবে। গণমাধ্যমে ব্যাংকের কিছু বিজ্ঞাপন দেয়ার বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাছাড়া কেউ চাইলে যখন খুশি বিজ্ঞাপন দিতেই পারে। এটি ব্যাংকের নিজস্ব ব্র্যান্ডিয়ের বিষয়।
কি পরিস্থিতিতে বিএবি চিঠি দিয়েছে তারও একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছে সংগঠনটি। সংগঠনটির দাপ্তরিক প্যাডে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ব্যাংকের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। কমে গেছে বিনিয়োগের উপর সুদের হারও। ব্যাংকের ঋণ আদায় প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে দিনদিন বেড়ে চলেছে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ। আমদানি ও রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ার কারণে ব্যাংকের আনুষঙ্গিক আয় একেবারেই কমে গেছে। হ্রাস পেয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহও।
বিএবির দাবি, ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের আয় ও ঋণ আদায় হচ্ছে না। এপ্রিল ও মে মাসের প্রাপ্য সুদ এক বছরের জন্য ব্লক করে রাখা হয়েছে। সাধারণ ছুটি চলা কালে ব্যাংকিং সেবা চালু রাখার জন্য কর্মীদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত প্রণোদনা বাবদ বিপুল অংকের ব্যয় নির্বাহ করতে হয়েছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সেনিটাইজেশন ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করার জন্য ব্যাংকের বাড়তি খরচ হচ্ছে। বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিকিৎসা ব্যয় ও স্বাস্থ্যবীমা খাতে। সব খাতেই ব্যাংকের আয় কমে যাওয়ায় ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি চলে যাচ্ছে নেতিবাচক ধারায়।
আপনার মন্তব্য