সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ জুলাই, ২০২০ ১১:২৫

অন্তত ৫৯ মামলার আসামি সাহেদ

করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ প্রতারণার অন্তত ৫৯ মামলার আসামি রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ।

মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নিজেকে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি বলে দাবি করলেও সাহেদ ছিলেন এক ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু ও পাষণ্ড।

অবশেষে করোনা মহামারির মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও জালিয়াতির জন্য গ্রেপ্তার হলেন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম।

বুধবার (১৫ জুলাই) ভোর রাতে সাতক্ষীরার দেবহাটা থানার সাকড়া বাজার এলাকার নবপতি ৩৩ বিজিবির পাশের সীমান্ত থেকে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাকে ঢাকায় আনা হয়েছে।

করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট আর করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া ছাড়াও এমএলএম ব্যবসা, মানি লন্ডারিং থেকে শুরু করে অসংখ্য প্রতারণার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। শুধু দুর্নীতি, অনিয়ম কিংবা প্রতারণাই নয়। ভাড়া করা চালক দিয়ে রাস্তায় সাধারণ মানুষকে আহত করে রিজেন্ট হাসপাতালে জোর করে ভর্তি করানো হতো। চালককে দেয়া হতো আট হাজার টাকা করে কমিশন। হাসপাতালে আসলে আইসিইউতে নিয়ে বড় অঙ্কের বিল ধরিয়ে দেয়াও ছিলো সাহেদের বড় প্রতারণা।

একটি বা দুটি নয় দেশের একাধিক ব্যাংকে আছে সাহেদের একাউন্ট। একেক হিসাবের জন্য সইও ছিল একেক রকম। কে-কোন ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করবেন তার জন্য লোকও ছিল আলাদা। শুধু পাওনাদার নয়, কথামতো কাজ না করলে সহকর্মীদের বেধড়ক পেটানোর নজিরও আছে তার।

২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংক থেকে তার রিজেন্ট হাসপাতালের জন্য এমআরআই মেশিন কিনতে ২ কোটি টাকা ঋণ নেন সাহেদ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি পদ্মা ব্যাংক নামে পরিচিত। কিন্তু ৫ বছরেও একটি কিস্তিও পরিশোধ করেননি সাহেদ। রিজেন্ট হাসপাতাল এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক কারণে রাজউকেও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন সাহেদ। তবে তার প্রতারণার বিষয়ে সাবধানতার কারণে তেমন সুযোগ নিতে পারেননি।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হয়েই ক্ষান্ত ছিলেন না রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান। সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্যও হতে চেয়েছিলেন। এজন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছিলেন।

নদী খননের ঠিকাদারিও করেছেন সাহেদ। কিন্তু সেখানেও ছিল প্রতারণা। কাজের মান ছিল খুবই নিম্নমানের। নাটোরে তেমনি একটি কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলো বিআইডব্লিওটিএ। কিন্তু মানেননি সাহেদ। হুমকি-ধামকি দিয়ে টাকা আদায় করেছেন।

পাওনা টাকা চাওয়ায় টর্চার সেলে নির্যাতন এমনকি হত্যা-গুমের হুমকি। রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের ভয়ে দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ী অমলেশ ঘোষকে। জিডি করেও সুরক্ষা পাননি ওই ভুক্তভোগী।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রতারক তকমা পাওয়া সাহেদ ঢাকার বাইরে ব্যবহার করতেন পুলিশ প্রটোকল। তার বিরুদ্ধে পাওনাদারদের নিয়মিত নির্যাতনের অভিযোগও অঢেল। তারপরও তিনি প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনের পর দিন অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। পেয়েছেন গণমাধ্যমের কিছু ব্যক্তির আনুকূল্যও।l

আপনার মন্তব্য

আলোচিত