সিলেটটুডে ডেস্ক

২২ জানুয়ারি, ২০২১ ০১:৫২

নিজের নামে পদ্মা সেতু চান না শেখ হাসিনা

ক্ষমতাসীন দলের একাধিক সংসদ সদস্য চাইছেন পদ্মা সেতু হোক শেখ হাসিনার নামে। তবে তারা দাবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নিজ দলের সদস্যের এমন প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় চেয়ারে বসে হাত ও মাথা নেড়ে তার অবস্থান জানিয়ে দেন সরকার প্রধান।

গত ১০ ডিসেম্বর দেশের বৃহত্তম সেতুটির সব স্প্যান বসে যাওয়ার পর ৬.১৫ কিলোমিটার সেতুটি দৃশ্যমান হয়। এখনও সেতুর উপরিভাগে সড়ক ও ভেতরে রেললাইনের কাজ বাকি। সেগুলো শেষ করে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে সেতুটি চালুর বিষয়ে আশাবাদী সরকার।

এই সেতুটি নির্মাণে শেখ হাসিনার ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল, তখন শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তে নিজ অর্থে সেতুর নির্মাণ শুরু হয়।

এর আগে বাংলাদেশ কখনও নিজের অর্থায়নে এত বড় প্রকল্প করেনি। সরকার যখন এই সিদ্ধান্ত নেয়, তখন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ এমনকি সরকারের ভেতর থেকেও কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, অর্থনীতি চাপে পড়বে কি না।

তবে দেখা গেল, বাংলাদেশ এত বড় প্রকল্পের চাপ নিতে পারে। আর দুর্নীতি চেষ্টার যে অভিযোগ বিশ্বব্যাংক এনেছিল, সেটি কানাডার আদালত গালগপ্প বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

সেতুর পুরোটা দৃশ্যমান হয়ে যাওয়ার পর প্রশংসায় ভাসছেন শেখ হাসিনা। আর এ কারণেই একাধিক সংসদ সদস্য দাবি তুলছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার নামেই হোক সেতুটি।

গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ প্রথমে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় তার পরে একই কথা বলেন আরেক সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ।

ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি প্রস্তাব রাখতে চাই শেখ হাসিনার কাছে। এই জাতির মাধ্যমে এই জাতীয় সংসদের ৩৫০ জন সংসদ সদস্য, যারা এই বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাদের পক্ষ থেকে আমি বলতে চাই, এই সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু হওয়া উচিত। এছাড়া আর কিছু হতে পারে না।’

এরপর প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে অসম্মতি জানান। তারপরও এ বিষয়ে সবুজ তার বক্তব্য চালিয়ে যান।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি, আপনি উদার। আপনি মহানুভবতার মূর্ত প্রতীক। প্রেরণা কোনোদিন প্রকাশ্যে আসে না। জাতীয় সংসদের ৩৫০ জন সংসদ সদস্যকে যদি জিজ্ঞেস করেন, সবাই সমস্বরে বলবে আপনার নামে করার।

‘নেত্রী, আপনি বড় হবেন না, আমাদেরকে বড় হবার সুযোগ দেন। আমরাও কৃতজ্ঞচিত্তে আপনার নামে নামকরণ করার মধ্য দিয়ে আমাদের দায়বদ্ধতা পূরণ করি। ইতিমধ্যে আপনি না করেছেন কিন্তু আমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে।’

এ সময়, প্রধানমন্ত্রী আবার মাথা নেড়ে ‘না’ করেন।

এক পর্যায়ে সবুজের সময় শেষ হলে মাইক বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর পংকজ দেবনাথ বলেন, ‘পদ্মাসেতু এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। বিশ্বব্যাংক যখন টাকা দিতে অস্বীকার করল তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললেন, নিজস্ব অর্থে পদ্মাসেতু হবে। পদ্মাসেতু এখন বাস্তবতা। শেখ হাসিনার নামে এই সেতুর নামকরণ করতে হবে। তিনি হয়তো বলবেন না, এটা তার বিনয়। কিন্তু তার নামেই পদ্মা সেতুর নাম দিতে হবে।’

তখনও প্রধানমন্ত্রী মাথা নেড়ে তার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত