সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ জানুয়ারি, ২০২১ ১৩:১০

রামেকে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নার্সকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নার্সকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে চারজন চিকিৎসক ও একজন মাত্র নার্সকে রাখা হয়েছে। গত ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) এই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ওই ডাক্তারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত চিকিৎসক মামুন-অর-রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানেসথেসিয়া ডিপ্লোমা করছেন। সেখান থেকেই কোর্স সম্পন্ন করতে রামেক হাসপাতালে এসেছেন বলে জানা গেছে। এর আগে তিনি ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে যোগ দেন। সেখান থেকে ছুটি নিয়ে তিনি অ্যানেসথেসিয়া কোর্স করছিলেন।

বিজ্ঞাপন

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৮ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে আইসিইউতে ডা. মামুনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সদ্য চাকরিতে যোগ দেওয়া ভুক্তভোগী নার্স (২৫)। ডা. মামুন তখন হাতের কনুই দিয়ে ওই নার্সের স্পর্শকাতর অঙ্গে আঘাত করেন। সেদিন বিষয়টি অসাবধানতাবশত হতে পারে মনে করে ওই নার্স চুপ করে ছিলেন। পরদিন ওই নার্স ডা. মামুনকে এনজি টিউব দিচ্ছিলেন। তখন ডা. মামুন তার হাত ধরেন। ওই নার্স দ্রুত সরে রিসিপশনে গিয়ে বসেন। এ সময় ডা. মামুন তার পিছু নিয়ে পিঠে এবং স্পর্শকাতর অঙ্গ হাত দিয়ে স্পর্শ করেন।

ক্রমাগত এমন যৌন হয়রানির শিকার ভুক্তভোগী নার্স ঘটনাটি তার এক সহকর্মীকে জানান। এরপর তিনি বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের রামেক হাসপাতাল শাখার সভাপতি শাহাদাতুন নূর লাকি ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ খলিলুর রহমানকে জানান। সেদিনই তারা আইসিইউতে ডা. মামুনের কাছে যান। তারা মামুনের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। ডা. মামুন এ সময় তাদের কাছে ‘সরি’ বলেন। তিনি কথাটি তিনি হাসপাতাল পরিচালকের কাছে গিয়েও ‘সরি’ বলতে চান। এরপর তারা সবাই হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ে যান।

বিজ্ঞাপন

সেখানে নার্সরা ডা. মামুনের এমন আচরণের বিষয়টি হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীকে জানান। এ সময় সেখানে উপস্থিত ডা. মামুন তার দোষ স্বীকার করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে হাসপাতালের পরিচালক তাৎক্ষণিকভাবে ডা. মামুনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন এবং পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

এদিকে তদন্ত কমিটির প্রধান রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) উপাধ্যক্ষ ডা. হাবিবুল্লা সরকারের নেতৃত্বে চারজন চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া কমিটিতে একজন মাত্র নার্সকে রাখা হয়েছে। নার্সদের অভিযোগ, তদন্ত কমিটির চারজন চিকিৎসক মিলে ঘটনাটিকে এখন ভিন্নখাতে নেওয়ার অপচেষ্টা করছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে রামেক নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন সোমবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে জরুরি সভা করেছে। অভিযুক্ত চিকিৎসককে রক্ষার চেষ্টা করা হলে নার্সরা কর্মসূচি দেবেন বলে ওই সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের রামেক হাসপাতাল শাখার সভাপতি শাহাদাতুন নূর লাকি বলেন, এখানে আমরা চাকরি করি। এখানেই ঘটনাটা ঘটেছে। কী হচ্ছে সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না। রামেক হাসপাতালের নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট আনোয়ারা খাতুন বলেন, এ রকম কথা আমি শুনেছি।

আইসিইউ’র ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, যৌন হয়রানির ঘটনার দিন তিনি ছুটিতে ছিলেন। তাই বিস্তারিত বলতে পারবেন না।

অভিযুক্ত চিকিৎসক মামুন-অর-রহমান বলেন, একটা সমস্যা হয়েছে। সেটা তো অনেক রকমই হতে পারে। এ বিষয়ে আর কী বলব! স্যারেরা তদন্ত করছেন। তাদের সঙ্গে কথা বললেই ভাল হয়।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, এটা ছোট-খাটো একটা ঘটনা। তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার-ই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত চিকিৎসককে ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত