সিলেটটুডে ডেস্ক

১৩ এপ্রিল, ২০২১ ২২:২৪

প্রতিদিন খুলবে না ব্যাংকের সব শাখা

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে নানা নাটকীয়তার পর ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত এলেও প্রতিদিন ব্যাংকের সব শাখা চালু থাকবে না।

সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই কিলোমিটার এলাকায় কোনো একটি ব্যাংকের কেবল একটি শাখা খোলা থাকবে।

প্রতি ব্যাংকের জেলা শাখা প্রতিদিন খোলা থাকলেও উপজেলা শাখা খোলা হবে এক দিন পর পর।

সোমবার ব্যাংক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানালেও মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সন্ধ্যায় যে বিজ্ঞপ্তি দেয়, তাতে এই বিষয়টির উল্লেখ আছে।

এই নির্দেশনার ফলে চলাচলে বিধিনিষেধের মধ্যে গ্রাহকদের ভোগান্তি বাড়তে পারে।

যেমন মতিঝিল এলাকায় বেসরকারি ব্যাংক আইএফআইসির দুটি শাখার একটি শাপলা চত্বরের পাশে, অন্যটি পুরানা পল্টন এলাকায়। আগে থেকে জানা না থাকলে গ্রাহককে একটি শাখায় গিয়ে ঘুরে আসতে হতে পারে অথবা অন্য শাখায় যেতে হবে তাকে।

যেহেতু চলাচলে বিধিনিষেধ থাকবে, তাই এই বাড়তি যাতায়াত তার জন্য হয়রানিমূলক হতে পারে। কারণ, পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে, এই সাত দিন বাইরে যেতে হলে মুভমেন্ট পাস নিতে হবে। আর রাস্তায় দেখলে পুলিশ সেই পাস পরীক্ষা করবে।

এর বাইরে যাতায়াত খরচের বিষয়টি তো আছেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বিধিনিষেধ চলাকালে বন্ধ শাখাগুলোর গ্রাহক সেবা চালু শাখার মাধ্যমে দিতে হবে। তবে বন্ধ শাখার গ্রাহকদের গ্রাহক সেবা প্রাপ্তি বিষয়ে অবহিত করতে উক্ত শাখার দৃশ্যমান স্থানে তা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংকে যাওয়ার আগে কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয় কোন শাখাগুলো চালু থাকবে, কোনগুলো বন্ধ থাকবে।

এই সময়ে ব্যাংকে স্বাভাবিক সময়েল তুলনায় জনবল কম থাকবে বলেও জানানো হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে। এতে বলা হয়, ‘রোস্টারিংয়ের মাধ্যমে সীমিত জনবল দিয়ে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে।’

সব খোলা রাখা শাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করতে হবে বলেও জানানো হয় সার্কুলারে। বিস্তারিত না বললেও মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। কারও জ্বর থাকলেও তিনি যেতে পারবেন না। আর কার্যালয়ে ঢুকে অবশ্যই জীবাণুনাশক দিয়ে হাত পরিস্কার করতে হবে।

গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধে ব্যাংকের সবগুলো শাখাই সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চালু থাকে।

১৪ এপ্রিল থেকে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর সোমবার সরকারের প্রজ্ঞাপনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানায়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এই সাত দিন কেবল বন্দর এলাকায় ব্যাংকের শাখা চালু থাকবে।

তবে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা শুরু হওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দিয়ে ব্যাংকিং সেবা চালু রাখার অনুরোধ করে।

এরপর ব্যাংকিং সেবা সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত চালু থাকার সিদ্ধান্ত দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও একটি চিঠির কপি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে লেখা ছিল ব্যাংকে লেনদেন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত চলবে।

তবে পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ওই চিঠি চূড়ান্ত ছিল না। প্রস্তাবনা ছিল মাত্র। পরে যে প্রজ্ঞাপন আসে, সেটিই চূড়ান্ত।

এই প্রজ্ঞাপনটির আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ সাইট সুপারভিশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটি ব্যতিত আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত এই সময়সূচি অনুযায়ী ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে।’

সার্কুলারে বলা হয়, ‘সিটি করপোরেশন এলাকার দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটি শাখা প্রতি কর্মদিবস খোলা রাখতে হবে।

‘প্রতিটি ব্যাংকের উপজেলা শহরের একটি শাখা খোলা থাকবে রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার।

‘জেলা পর্যায়ে সদর শাখা প্রতিদিন খোলা থাকবে।’

তবে প্রধান শাখাসহ বৈদেশিক মুদ্রায় অনুমোদিত ডিলার শাখা খোলা রাখতে হবে প্রতিদিন।

সমুদ্র/স্থল/বিমানবন্দর এলাকায় (পোর্ট ও কাস্টমস এলাকা) ব্যাংকের শাখা/ উপ-শাখা/বুথগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ বন্দর/কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাক্রমে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিতপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এই সাত দিন বিধিনিষেধ চলাকালে প্রতিটি ব্যাংক তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করবে বলেও সার্কুলারে জানানো হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিধি নিষেধ চলাকালে গ্রাহকদের হিসাবে সব ধরনের জমা এবং উত্তোলন, ডিমান্ড ড্রাফট/পে-অর্ডার ইস্যু ও জমা গ্রহণ, ট্রেজারি চালান গ্রহণ, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের আওতায় প্রদত্ত ভাতা/অনুদান বিতরণ, বৈদেশিক রেমিট্যান্সের অর্থ পরিশোধ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃশাখা অর্থ স্থানান্তর, এনআরবি বন্ডে এবং বিভিন্ন প্রকার জাতীয় সঞ্চয় সার্টিফিকেটের মেয়াদপূর্তীতে নগদায়ন ও কুপনের অর্থ পরিশোধ, ইউটিলিটি বিল (গ্যাস/পানি/বিদ্যুৎ/টেলিফোন) গ্রহণসহ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক চালু রাখা বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেমের/ক্লিয়ারিং ব্যবস্থার আওতাধীন অন্যান্য লেনদেন সুবিধা চালু থাকবে।

বুথ নিয়ে যে আদেশ

ব্যাংক খোলা রাখার বিষয়ে আদেশে এটেএম বুথের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশও বিবৃত করা হয়।

এতে বলা হয়, কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন চালু রাখার সুবিধার্থে এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত নোট সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

বুথগুলোতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা বা স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধাও সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত