সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০১:২৭

ঝুমন দাসের অপরাধ কী, জানতে চান স্ত্রী

হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার ঝুমন দাসের কী অপরাধ, তা জানতে চেয়েছেন তার স্ত্রী সুইটি রানী দাস।

পাঁচ মাস ধরে সুনামগঞ্জের কারাগারে বন্দি ঝুমনের মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত এক সাংস্কৃতিক সমাবেশে এ প্রশ্ন করেন তিনি।

বুধবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

গত মার্চে সুনামগঞ্জের শাল্লায় হেফাজত নেতা মামুনুল হকের মজলিসে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্যের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন ঝুমন। পরে হিন্দুপল্লিতে হামলা হয়।

সে সময় ঝুমন দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। হামলার ঘটনায় যে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের বহুজন জামিনে মুক্তি পেলেও ঝুমনের মুক্তি হয়নি।

ঝুমনের স্ত্রী সুইটি রানী দাস বলেন, ‘সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমার স্বামী। আমি বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। আমি নিজেও অসুস্থ। নিরুপায় হয়ে স্বামীর মুক্তির দাবিতে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সাতবার জামিন চাওয়ার পরও আমার স্বামীর জামিন হয়নি। কিন্তু যারা অপরাধী, তারা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কী অপরাধ ছিল আমার স্বামীর?’

এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় রুদ্ধ হয়ে যায় সুইটি দাসের কণ্ঠ।

ঝুমনের স্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, দ্রুত আমার স্বামীকে মুক্তি দিয়ে দেন। আমি আর এ সমস্যার মধ্যে থাকতে চাই না। স্বামীর মুক্তির জন্য আর কারও কাছে যেতে চাই না।’

উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সাংবাদিক এ কে এম শাহীন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য কাজল দেবনাথ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদ, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সহসভাপতি অনিক রায় প্রমুখ।

সমাবেশে লিখিত বার্তা পাঠিয়ে সংহতি জানান মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল।

উদীচীর সহকারী সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম সমাবেশ পরিচালনা করেন।

আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন অবিলম্বে ঝুমন দাসের মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান।

খান আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, ‘শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলার পর আমরা সেখানে গিয়েছি। ঘূর্ণিঝড়ের পর যেমন একটা এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়, সেখানে ঠিক তা-ই হয়েছে। একজন ধর্মব্যবসায়ী যে ধর্মীয় উন্মাদনা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তার বিরুদ্ধে ঝুমন দাস সত্য কথা বলেছিলেন বলে তার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।

‘কিন্তু যারা সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়েছিল, তারা এলাকায় বহাল তবিয়তে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ঝুমন দাসের মুক্তি হচ্ছে না। হয়তো এর পেছনে রাঘব বোয়ালের হাত রয়েছে। তার স্ত্রী-সন্তান যে মানবেতর জীবন যাপন করছে, অন্তত এইটা দেখে সরকারের উচিত ঝুমন দাসের মুক্তি দিয়ে দেয়া।’

সভাপতির বক্তব্যে জামশেদ আনোয়ার তপন বলেন, ‘আমরা এই সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবি জানাব, আপনারা ঝুমন দাসের মুক্তি দিন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করুন।

‘এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জনগণকে নিরাপত্তা দেয় না। এই আইন লুটপাটকারীদের নিরাপত্তা দেয়। এটা স্বাধীনতা, মৌলিক মানবাধিকার ও ৭২-এর সংবিধানের পরিপন্থি। তাই এই আইন বাংলাদেশে থাকতে পারে না।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে সমাবেশে গান পরিবেশন করেন ঋষজ শিল্পগোষ্ঠীর সদস্য বুলবুল, গণসংগীত পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও চারণ শিল্পীগোষ্ঠী।

সেখানে নাটক 'মোড়ল পুলিশিং' ইন্ট্রোভাইজেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রাচ্যনাট।

নাটক 'রাতের রানী' পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন বটতলা এবং 'একটি সাহসী ফুল' পরিবেশন করে থিয়েটার বায়ান্ন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত