সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০১:০৩

শিয়া মসজিদ ও স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার

বগুড়ার শিবগঞ্জের হরিপুরে শিয়া মসজিদে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে হতাহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কেবল বগুড়াই নয় শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যেও অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে গুলিবষর্ণের পর ঢাকায় শিয়া মসজিদ ও তাদের স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

শুক্রবার মসজিদগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এছাড়া শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পুরান ঢাকার হোসেনী দালান এলাকাতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে বগুড়ার প্রায় তিন দশক ধরে এই এলাকায় সুন্নি ও শিয়া মতাদর্শে বিশ্বাসীরা একসঙ্গে বাস করছে; কখনো ধর্মীয় কোনো বিষয় নিয়ে বিতণ্ডা হয়নি। হঠাৎ মসজিদে নামাজের সময় এধরণের হামলায় হতভম্ব হয়ে পড়েছেন উভয় সম্প্রদায়ের মুসলিমরা।

এলাকার আতঙ্কিত মানুষরা ভেবে পাচ্ছেন না- কি কারণে গুলি করে নামাজরত মানুষকে হত্যা করা হল।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে, বৃহস্পতিবার মাগরিবের সময় কিচক ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের আল মোস্তফা মসজিদে অজ্ঞাত তিন বন্দুকধারী হামলা চালায়। বন্দুকের গুলিতে নিহত হন ওই মসজিদের মুয়াজ্জিন মোয়াজ্জেম হোসেন (৭০)। আহত হন ইমাম শাহিনুর রহমান (৬০) এবং স্থানীয় বাসিন্দা দুই মুসল্লি তাহের মিস্ত্রি (৫০) ও আফতাব আলী (৪০)।

আল মোস্তফা মসজিদের পশ্চিম দিকে জনবসতিশূন্য ফাঁকা মাঠ; অদূরেই পরিত্যক্ত একটি ইটভাটা। উত্তর দিকে কিছুটা দূরে বগুড়া-জয়পুরহাট সড়ক। মসজিদের দক্ষিণ দিক দিয়ে একটি পাকা রাস্তা চলে গেছে। দু’পাশেই শিয়া-সুন্নি মতাদর্শের লোকের বসবাস।

সে এলাকায় শিয়া-সুন্নীদের মধ্যে কোন বিরোধ ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে তারা পাশাপাশি বসবাস করতেন। তবে মাঝে মাঝেই এই এলাকায় বিভিন্ন ইসলামী জলসায় বাইরে থেকে আসা বক্তারা ‘শিয়ারা কাফের’ বলে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করত কেউ কেউ।

বছরখানেক আগে শিবগঞ্জ উপজেলার আলীয়ারহাট এলাকায় এক জলসায় বগুড়া শহরের কাটনার পাড়া কুবা মসজিদের ইমাম মাওলানা আশরাফ আলী সিদ্দিকী এই ধরনের বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি আশপাশের অনেক এলাকার জলসায়ও যান জানালেন ওই এলাকার সুন্নি মুসলিম হায়দার আলী ।

এদিকে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে বিভিন্ন মসজিদে জুমা নামাজের খুতবায় বিশেষ বয়ানের অনুরোধ জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

পুলিশ জানায়, যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শিয়াদের মসজিদগুলোতে জুমা নামাজের আগেই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হয়। জুমা নামাজের সময় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ছাড়াও সব ধরনের মসজিদেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। মসজিদ কেন্দ্রীক গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, শুধু শুক্রবার নয়, যেকোনো সময় শিয়া মসজিদগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার বিষয়ে জুমার খুতবায় সব মসজিদের ইমামদের বিশেষ বয়ান করতে অনুরোধ করা হয়। ইমামরা যাতে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে মুসল্লিদের মধ্যে সব সময় বয়ান দেন সে অনুরোধও করা হয়েছে।

এদিকে, শিবগঞ্জের ওই শিয়া মসজিদে হামলার 'দায় স্বীকার' করে এক বিবৃতি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। ওই হামলার পর জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা 'সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ' এর ওয়েবসাইটে এক প্রতিবেদেন এ দাবি করা হয়।

এর আগেও বাংলাদেশে দুই বিদেশি নাগরিককে হত্যা এবং পুরান ঢাকায় তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে হামলাসহ কয়েকটি ঘটনার দায় একইভাবে স্বীকার করে আইএস। তবে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করে আসছে সরকার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত