সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ অক্টোবর, ২০২১ ১৪:১৯

৩০ অক্টোবর থেকে স্কুল শিক্ষার্থীদের গণটিকা শুরু

পাঠদান কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার আওতায় আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব শিক্ষার্থীর মাঝে গণটিকা প্রয়োগ শুরু হবে ৩০ অক্টোবর।

স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক করোনা প্রতিরোধী টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিআর মানিকগঞ্জে ১০০ শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া হয়।

এবার ব্যাপক পরিসরে স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনতে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। পরিকল্পনা অংশ হিসেবে, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া হবে। আর এ কার্যক্রম শুরু হতে পারে আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে।

শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, ‘১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন টিকা দেয়া হবে। আশা করছি, এ কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে।’

মাউশি মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর স্কুল ও কলেজ মিলিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৭৮৩টি। এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬ লাখ ১৫ হাজার। আমরা এদেরকে প্রথম ধাপে টিকার আওতায় আনব। এ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে বঙ্গবন্ধু আন্তজার্তিক সম্মেলন কেন্দ্রে। যেখানে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার জন্য ২০০টি বুথ থাকবে।’

কোন প্রক্রিয়ায় স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে, এমন প্রশ্নে গোলাম ফারুক বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্তের পর তারা যেন সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করতে পারে সে বিষয়ে মাউশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এরপর আমরা স্কুল অনুযায়ী তারিখ নির্ধারণ করে দেব যেন সুশৃঙ্খলভাবে টিকাদান কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।’

দেশের ২১টি পয়েন্টে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা আছে জানিয়ে গোলাম ফারুক বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর টিকাদান কার্যক্রম শেষ হলে পরর্বতীতে দেশের ২১টি পয়েন্টে এ কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়া হবে।’

চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসির শিক্ষার্থীরা টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সব শিক্ষার্থীকে সমান গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আশা করছি, টিকার প্রাপ্যতা নিয়ে সংকট হবে না।’

বেশির ভাগ শিক্ষার্থী টিকার আওতায় এলেই জানুয়ারি থেকে স্কুল-কলেজে স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান মাউশি মহাপরিচালক।

স্কুলশিক্ষার্থীদের তথ্য চেয়েছে মাউশি

গত ১৫ অক্টোবর ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দিতে রাজধানীর স্কুল-কলেজগুলোর কাছে তথ্য চেয়ে অফিস আদেশ জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

রাজধানীর স্কুল-কলেজগুলোকে ১৯ অক্টোবরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের তথ্য ইমেইলে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন ঢাকা মহানগরীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ টিকা দেয়ার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের তথ্য নির্ধারিত ছক অনুসারে এক্সেল শিটে আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমেইলে ([email protected]) পাঠাতে অনুরোধ করা হলো।

আদেশে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের তথ্যগুলো অবশ্যই ইংরেজিতে এবং সংযুক্ত এক্সেল ফাইলে পূরণ করে পাঠাতে হবে।

শিক্ষার্থীদের ১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধন নম্বর, নাম, লৈঙ্গিক পরিচয়, প্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন, প্রতিষ্ঠানের নাম, জন্মতারিখ এবং অভিভাবকের ফোন নম্বর দিয়ে ইংরেজিতে এক্সেল শিট পূরণ করে ইমেইলে তথ্য পাঠাতে হবে।

স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া শুরু

গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১০০ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের দেশে এক কোটির বেশি ছেলেমেয়ে আছে, যাদের আমরা টিকা দেব। প্রথম পর্যায়ে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকা দেব এবং পর্যায়ক্রমে বাকিদের টিকা দেয়া হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ফাইজারের টিকা ভালো ও নিরাপদ। এই টিকা আমেরিকা, ইউরোপসহ অন্য দেশে দেয়া হচ্ছে। এ কারণে এই টিকা আমরা ছাত্রছাত্রীদের দিচ্ছি। আমরা চাই আমাদের শিশুরা নিরাপদে থাকুক।

‘আজকে মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ জন ছাত্রছাত্রীকে টিকা দেয়া হচ্ছে। এর পরে সারা দেশে ২১টি জায়গায় এই টিকা দেয়া হবে এবং ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়ে যাবে।’

১২-১৭ বছর বয়সের শিক্ষার্থী সংখ্যা কত

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে জানা যায়, ঢাকা মহানগরীর ৭৮৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ লাখ ১৫ হাজার। আর সারা দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী আছে ১ কোটি ২৫ লাখ ২ হাজার ১২৬ জন।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এর প্রায় দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয়। তবে প্রতিদিন সব শ্রেণিতে ক্লাস হচ্ছে না।

শুধু চলতি বছরের ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আর অন্যান্য শ্রেণির মধ্যে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম, নবম শ্রেণিতে দুই দিন এবং অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক দিন ক্লাসে আসতে বলা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত