সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ জানুয়ারি, ২০২২ ১৫:৪২

দুর্ঘটনারোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ট্রাফিক আইন পড়ানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না দেখাতে এবং আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ট্রাফিক নিয়ম সম্পর্কে প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। এছাড়া গাড়ির ফিটনেস নিয়মিত চেক করার পাশাপাশি চালকরা যেন হেল্পারকে গাড়ি চালাতে দিতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতেও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) সকালে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ঢাকা এয়ারপোর্ট মহাসড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাসের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। অ্যাক্সিডেন্ট অ্যাক্সিডেন্টই। দোষ কার সেটা পরে দেখা যাবে।…অনেক অ্যাক্সিডেন্ট এভাবে হয়, ধাক্কা লাগল পড়ে গেল। ড্রাইভারের মনে একটা ভয় থাকে। যদি আমি গাড়ি থামাই আমাকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলবে।

‘সেই ভয়ে সে গাড়ি চালিয়ে যায়। আর যে পড়ে যায়, সে হয়তো বেঁচে যেত। কিন্তু ভীত হয়ে যখন গাড়ি চালিয়ে যায়, চাকার তলে সে সম্পূর্ণ পিষ্ট হয়ে যায়। একটা মানুষের জীবন চলে যায়।’

দোষ কার সেটা খতিয়ে দেখা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু হলে যারা ড্রাইভারকে ধরে পেটাবেন, গাড়িতে আগুন দেবেন, গাড়ি পোড়াবেন- এটা কিন্তু ঠিক না। আইন কেউ হাতে তুলে নেবেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, সেটা তারাই দেখবে, আইনগত কী ব্যবস্থা নেয়া যায়।’

পথচারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা প্রবণতা আছে। কোনো একটা অ্যাক্সিডেন্ট হলেই সবার আগে গাড়ির ড্রাইভারকে ধরে পেটানো হয়। এমনকি অনেক সময় গণপিটুনি দিয়ে তাকে মেরেই ফেলা হয়। হত্যা করা হয়। যখন একটা দুর্ঘটনা ঘটে, আমার এটা অনুরোধ থাকবে সবার কাছে যে সেই দুর্ঘটনা কেন ঘটল, কী কারণে ঘটল, কার দোষে ঘটল, সেটা বিবেচ্য বিষয়। সেটা খুঁজে দেখা দরকার।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে সবার জ্ঞান থাকা দরকার। সেটা মেনে চলা দরকার। ট্রাফিক রুল সবাই মেনে চলবেন, মোবাইল ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে বলতে ওই সড়ক দিয়ে চলা বা রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটা বা রেললাইন পার হওয়া বা সড়ক পার হওয়া- এটা কখনও কেউ করবেন না। এটা বন্ধ করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে অবশ্যই দেখবে দোষটা কার। প্রায় ছাত্ররা মারা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মোবাইল ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে বলতে চলছে, অথবা রাস্তা ছেড়ে দিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটা শুরু করেছে।

যখন একটা যানবাহন চলাচল করে, সেই যানবাহনটার পক্ষে সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক কষা সম্ভব হয় না। এটা যান্ত্রিক বিষয়, এটা মাথায় রাখা দরকার।’

এ সময় গাড়ির চালক ও হেল্পারদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি যে চালকরা দীর্ঘ সময় গাড়ি চালালে অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে, অনেক সময় ঝিমিয়ে পড়ে, সেটা হয়। সে জন্য আমরা এখন থেকে হাইওয়েগুলোতে চালকদের জন্য বা যারা যাত্রী তাদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

সুনির্দিষ্ট দূরত্বের মাঝে একটি করে বিশ্রামাগার বা সার্ভিস স্টেশন থাকবে এবং চালকদের প্রশিক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ড্রাইভাররা যদি ক্লান্ত হয় সেটা তারা বলতে পারেন বা কিছুক্ষণ গাড়ি থামাতে পারেন।

‘কিন্তু ড্রাইভার পাশে বসে বা রেস্ট নিতে গিয়ে হেল্পারকে দিয়ে গাড়ি চালানো, যার কোনো ভারী যান চালানোর মতো দক্ষতা নেই, তাকে দিয়ে চালানোটা ঠিক না। এটা খুব অন্যায় কাজ। এ বিষয়গুলোর দিকে সবাই দৃষ্টি দিলে, বিশেষ করে যারা পথচারী তারা যদি সতর্ক থাকে তাহলে কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট অনেক কম হবে।’

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় চলাচলের সময় অবশ্যই ট্রাফিক রুল মানতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে আমি বলব, প্র্রতিটি স্কুল কলেজে ট্রাফিক রুল সম্পর্কে একেবারে ছোট্ট বেলা থেকে শিক্ষা দেয়া উচিত। প্রত্যেক স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে এই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলব, আপনারা এ বিষয়ে উদ্যোগ নেন। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই নির্দেশনাটা দেবেন। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমবে। তা ছাড়া আমাদের যানবাহনগুলো, ভারী যানবাহনগুলো বাস-ট্রাক সেগুলোতে যান্ত্রিক ত্রুটি আছে কি না সব সময় পরীক্ষা করতে হবে। এ বিষয়টি সবাই নজরে রাখবেন।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত