সিলেটটুডে ডেস্ক

০৪ জুলাই, ২০২২ ২১:৪২

বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা নিয়ে শঙ্কা পরিকল্পনামন্ত্রীর

চলতি বছরে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সড়কে যে ক্ষতি হয়েছে তা কত দিনে কাটিয়ে ওঠা যাবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

‘সিলেট অঞ্চলে ঘন ঘন বন্যা: কারণ, পুনর্বাসন ও স্থায়ী সমাধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এমন শঙ্কা প্রকাশ করেন।

অল ইউরোপিয়ান বাংলা প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই আলোচনার আয়োজন করে সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতি (সিবিসাস), ঢাকা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এবারের বন্যায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতির তুলনায় জীবনহানি কম হয়েছে। তবে স্কুল-কলেজ ও পথঘাট যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা কত দিনে কাটিয়ে উঠতে পারব তা নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে।’

হাওরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সমালোচনার জবাবে এম এ মান্নান বলেন, ‘আপনারা বাউল গান শুনতে হাওরে যাবেন, বজরায় টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরবেন, নিজেরা ভালো থাকবেন আর হাওরের মানুষ গলাপানিতে ডুবে থাকবে তা কী করে হয়? তারাও তো ভালো জীবনের প্রত্যাশা করে।’

মন্ত্রী জানান, বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ভাবছে সরকার। কৃষি পুনবার্সন প্রকল্পে কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের সার ও বীজ সরবরাহ করবে। হাওর অঞ্চলে সিলেটের খাসিয়াদের মতো বাঁশের মাচার ওপর ঘর নির্মাণ করা যায় কি না তা নিয়েও ভাবা হচ্ছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘বন্যা প্রতিরোধে দেশের খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-বাওর, বিলসহ অন্যান্য জলাশয় খননে পদক্ষেপ নেয়া হবে। জলাশয়গুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে পারলে বন্যার তীব্রতা কমবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমাতে পরিবেশ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। অবাধে বৃক্ষ নিধন, পাহাড়, টিলা কাটা বন্ধ করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘এবারের বন্যায় সরকারের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল। বলা যেতে পারে, যে প্রস্তুতি ছিল তা আপ টু মার্ক ছিল না। তবে এতে সরকারকে পুরোপুরি দোষারোপ করা যাবে না। কারণ এবার যে এমন বন্যা হবে তা ছিল ধারণার বাইরে।’

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘আমাদের ২৫টি আন্তঃসীমান্ত নদীর তথ্য রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি, আমাদের ৫৪টি নদীর তথ্যই লাগবে।

‘সিলেট অঞ্চলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেটে ১২০ কোটি ৮১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, সুনামগঞ্জে ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা, মৌলভীবাজারে ৯৯৬ কোটি টাকা ও হবিগঞ্জে ৫৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান।’

পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্যানেল বিশেষজ্ঞ ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা জলাশয়গুলোকে ভরাট করে কৃষি জমি করে ফেলছি। আমরা মনে করি, কৃষি জমি হলে ব্যক্তি পর্যায়ে লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু আমরা এটা জানি না যে জলাভূমির আউটপুট কোনো অংশে কম নয়। হাওর এলাকার যেসব রাস্তা পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে, সেগুলো সংকুচিত করে প্রয়োজনে ব্রিজগুলো ওপেন করে দিতে হবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশন আইনবিদ সমিতি-বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আগামীতে কপ-২৭ সম্মেলনে বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের ক্ষতি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।’

সভায় একাধিক আলোচক বলেন, ‘এবার নজিরবিহীন বন্যায় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা উদ্বেগজনক। যথাযথ প্রদক্ষেপ না নিলে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি বার বার হতে পারে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রচলিত ব্যবস্থায় এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যাবে না।’

সিবিসাসের সভাপতি আজিজুল পারভেজের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মতীন উদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-আইপিডির পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম এবং রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার-আরডিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ।

অনুষ্ঠানে দুর্গত এলাকার ত্রাণ বিতরণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি ও জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সৈয়দ জগলুল পাশা।

অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন গোলটেবিল আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক এহসানুল হক জসীম। স্বাগত বক্তব্য দেন সহ-সভাপতি নিজামুল হক বিপুল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত