সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ জুলাই, ২০২২ ১৫:০৫

শাবিপ্রবিতে ছুরিকাঘাতে নিহত বুলবুলের বাড়িতে শোকের মাতম

ছুরিকাঘাতে নিহত শাবিপ্রবি বুলবুল আহমদ

মাস আটেক আগে স্বামীকে হারিয়েছেন ইয়াসমিন বেগম। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। এর মধ্যেই খবর এসেছে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেছে ছোট ছেলেটার। নাড়ি ছেড়া ধনকে হারিয়ে এবার পাগলপ্রায় মা। কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।

নরসিংদীর চিনিসপুর ইউনিয়নের নন্দীপাড়া এলাকায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) নিহত শিক্ষার্থী বুলবুল আহমদের বাড়ি। মঙ্গলবার সকালে এই ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ইয়াসমিন বেগমসহ স্বজনরা।

প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বুলবুল আর নেই, এই কথা মানতে পারছেন না তারা। তাদের ভারী কান্নায় ভিজে উঠছে অন্যদের চোখ। সেই অশ্রু তারা আড়াল করছেন সঙ্গোপনে।

শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যরা আছেন বুলবুলের মরদেহ আসার অপেক্ষায়। তাকে দাফন-কাফনের প্রস্তুতি চলছে। এর ফাঁকে কথা হয় বুলবুলের বড় চাচা শহিদুল্লাহ মিয়ার সঙ্গে।

তিনি জানান, গত বছরের ডিসেম্বর স্ট্রোক করে মারা যান বুলবুলের বাবা আব্দুল ওহাব। তার মৃত্যুর পর অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে চলছিল পরিবারটি। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট বুলবুলের ইচ্ছা ছিল মায়ের কষ্ট ঘোচাবে। বিসিএস দিয়ে বড় কর্মকর্তা হবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেলে।

শাবির গাজীকালুর টিলা এলাকা থেকে সোমবার সন্ধ্যায় বুলবুলকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মৃত ২২ বছরের বুলবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়তেন।

তার সহপাঠী অমিত ভৌমিক জানান, সন্ধ্যায় গাজীকালুর টিলায় বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। হামলাকারীরা ছিনতাইকারী হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বুলবুলের স্বজনরা। চাচা শহিদুল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আশার প্রদীপ নিভে গেল। বুলবুল মতো ছেলে হয় না। আমরা কোনো সময় তার বিরুদ্ধে মন্দ কথা শুনিনি। এই হত্যার বিচার চাই আমরা।’

ছোট ভাইয়ের মরদেহ আনতে সোমবার রাতেই সিলেটের উদ্দেশে বাড়ি ছেড়েছেন বুলবুলের বড় ভাই মো. জাকারিয়াসহ ১০/১২ জন।

বুলবুলের বড় বোন সোহাগী আক্তার জানান, শাটির পাড়া কালি কুমার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে এসএসসি ও নরসিংদী আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এসএইচসিতে জিপিএ ফাইভ পায় বুলবুল। পরে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

তিনি বলেন, ‘বুলবুল তাকে বলতো, আপা চিন্তা করবি না। একদিন আমি অনেক বড় হব। পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করব। কিন্তু এ কী হয়ে গেল। কারা হত্যা করল বুলবুলকে।’

কথাগুলা বলতে বলতে গলা ধরে আসে সোহাগীর। বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার আদরের ছোট ভাইটা আর নাই। বাবার পর এভাবে ভাইকে হারাতে হবে তা কখনও ভাবনায় আসেনি। আমার ভাইয়ের আত্মার শান্তি কামনায় সবার কাছে দোয়ার দরখাস্ত করছি।’

বুলবুলের মরদেহ নোয়াকান্দী গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলেও জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত