সিলেটটুডে ডেস্ক

১৪ আগস্ট, ২০২২ ২০:৩৮

আপনারা সবাই আমারে খায়া ফেললেন, সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো আছে, বাংলাদেশের মানুষ বেহেস্তে আছে- এটা বোঝাতে গিয়ে নিজের দেয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা আবার দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, বেহেশতের যে কথা তিনি বলেছেন, সেটি আক্ষরিক অর্থে বলেননি। এটা ছিল কথার কথা।

দুই দিন আগে সিলেটে দেয়া বক্তব্যের পর দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা আর ফেসবুকজুড়ে ট্রলের মধ্যে মন্ত্রী ব্যাখ্যা দেন শনিবার। রোববার বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের সঙ্গে আলোচনা শেষেও প্রসঙ্গটি তোলেন তিনি। বলেন, ‘আপনারা সবাই আমারে খায়া ফেললেন…।

গত শুক্রবার সিলেটে দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো ট্রু সেন্সে (আক্ষরিক অর্থে) বেহেশত বলিনি। এটা ছিল কথার কথা। কিন্তু আপনারা তো সবাই মিলে আমারে খায়া ফেললেন।


‘আমরা অনেকের চেয়ে ভালো আছি। বলতে পারেন বেহেশতে আছি। আর যায় কোথায়! সবাই আমারে এক্কেরে...। এই হলো বাংলাদেশের মিডিয়ার স্বাধীনতা খর্ব।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কি মিডিয়ার স্বাধীনতা খর্ব করেছি? আফটার অল আই অ্যাম আ পাবলিক ফিগার। নিশ্চয়ই আপনারা আমাকে ক্রিটিসাইজ করতে পারেন। আই ডোন্ট মাইন্ড। তবে আগামীতে সাবধান হতে হবে।

‘আমি খোলামেলা মানুষ। আমি শিক্ষক মানুষ। আমি যেটা মনে করি, সেটা খোলামেলা বলে ফেলি। আমার দল থেকে আমাকে ‘ইয়ো’ করেছেন। পজিশনে থেকে ভালো কথা বলা দরকার।’

বিচারবহির্ভূত হত্যা বলে কিছু নেই

এ ধরনের ঘটনা আগে হলেও এখন নেই বলেও দাবি করেন মোমেন। বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে কোনো তথ্য পেলে সরকার তা তদন্ত করবে।’

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটকে এ তথ্য জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

মোমেন বলেন, ‘আমরা বলেছি- গুম বলে আমাদের দেশে কোনো শব্দ নেই। কিছু কিছু লোক নাকি বলেছে যে ৭৬ জন লোক গত ১০ বছরে নিখোঁজ হয়ে গেছে। তারা বলেছে, সরকার নাকি নিখোঁজ করেছে। ৭৬ জনের মধ্যে আবার ১০ জনকে দেখা যায়, পাওয়া গেছে। বাকিগুলো আমরা ঠিক জানি না। পরিবার কোনো তথ্য দেয় না। পরিবারকে বলা হয়, তারা ভয়ে আর কোনো তথ্য দেয় না। আমরা জানি না তারা কোথায় গেছেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে তারা কিছু বলেনি। আমরা নিজে থেকেই বলেছি। এ রকম বলা হয়েছে যে কিছু লোককে কিলিং করা হয়েছে। আমাদের এখানে আগে হতো এটা- ২০০০, ২০০৩ ওই সময়ে। বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে কোনো তথ্য পেলে তদন্ত করা হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ প্রতি বছর হাজারখানেক লোককে মেরে ফেলে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘আমাদের দেশে আগে হতো; ২০০২ বা ২০০৩ বা পরে এবং ওই সময় হার্টফেল হতো। কিন্তু এখন আর হার্টফেল নেই।’

আলোচনায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের সঙ্গে আলোচনায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি এসেছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বলেন, ‘ওদের (জাতিসংঘ) ধারণা বাংলাদেশে টেলিভিশন মিডিয়াগুলোতে কোনো ফ্রিডম নেই। কেউ নিজের কথা বলতে পারে না। তাদের (গণমাধ্যম) সেন্সর করে। আমি বলেছি, আমার এমন কিছু জানা নেই। আমি তো দেখি আমাদের মিডিয়া ভেরি স্ট্রং। প্রাইভেট টেলিভিশন একটা কথা বললেই ধরে ফেলে।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহায়তা অব্যাহত রাখবে জাতিসংঘ

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘ খুব উদ্বিগ্ন এবং এ সমস্যা সমাধানে তারা আমাদের সহযোগিতা করবে বলে জানান মিশেল ব্যাচেলেট।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি রোহিঙ্গা আগেও এসেছিল বহুবার এবং ফেরত গেছে। এবারের সংখ্যা বেশি। তবে দুঃখের বিষয় যারা মানবাধিকারের জন্য শান্তি পুরস্কার পেয়েছে, তারা মিয়ানমারের সঙ্গে আগের মতো সম্পর্ক বজায় রাখছে।

‘তারা চুটিয়ে ব্যবসা করছে এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ব্যবসা ১৫ গুণ বেড়েছে। শুধু যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য বেড়েছে ১০০ গুণ। বিনিয়োগ হয়েছে গত পাঁচ-ছয় বছরে ২৩০ কোটি ডলার। আমরা বলেছি আপনারা রাখাইনে গিয়ে সাহায্য করেন।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত