সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ২২:৪১

গ্রন্থমেলার পরিসর বাড়ছে, থাকবে ‘সর্বোচ্চ’ নিরাপত্তা

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বাড়তি নিরাপত্তার পরিকল্পনা করেছে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি; এবার বাড়ানো হচ্ছে মেলার পরিসরও।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) গ্রন্থমেলা উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে একাডেমির এক সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

তিনি বলেন, "অতীতের সমস্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিদ্র করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে।

"ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বইপ্রেমীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে।"

তবে ছুটির দিনগুলোতে বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে বলে জানান সংস্কৃতিমন্ত্রী।

সংস্কৃতিমন্ত্রী জানান, এবারের বইমেলায় থাকবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। গতবছরের মতো যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকবে প্রশাসন। এ জন্য র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে প্রতিটি মুহূর্তে তৎপর। শুধু বইমেলা প্রাঙ্গণই নয়, এর আশপাশের এলাকাও থাকবে সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে। মেলাকে ঘিরে দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত মেলা চলাকালে সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ রাখার পাশাপাশি আর্চওয়ে থাকবে মেলার প্রতিটি প্রবেশমুখে। দর্শনার্থীদের অবাধে প্রবেশের জন্য থাকবে বাড়তি প্রবেশপথ ও বাড়তি নির্গমনপথ। মেলার ভেতর-বাইরে আরো বেশি আলোর ব্যবস্থা করা হবে।

শুধু তাই-ই নয়, অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬-এর পরিসর আরো বাড়ানো হচ্ছে। বাংলা একাডেমির অংশ ছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চও মেলার মূল পরিসরের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। রমনা কালিমন্দিরের প্রবেশের পথ থেকেই শুরু হবে মেলাপ্রাঙ্গণ। উদ্যানে টিনের বেষ্টনীর পাশাপাশি বাঁশের আরেকটি বেষ্টনী থাকবে। তা ছাড়া বইমেলাকে এমনভাবে বিন্যস্ত করা হচ্ছে, যাতে দর্শনার্থীরা অনায়াসে প্রবেশ ও বের হতে পারে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা হবে আরো উন্নত।

এবারের গ্রন্থমেলা নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকেই সভা-আলোচনা শুরু করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমিসহ বইমেলার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানই। আজ সোমবারও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো চলে দীর্ঘ বৈঠক। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টায় সভায় সিদ্ধান্তসমূহ সাংবাদিকদের জানান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

তিনি বলেন, ‘সভাটি বিশেষত ছিল বইমেলার নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে। প্রশাসন, গণপূর্ত, বিদ্যুৎ, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। এবারের বইমেলায় থাকবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাসীদের জন্য জিরো টলারেন্স। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে।’

সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটি শুধু নিছক বইমেলাই নয়, এটি মুক্তচিন্তার মেলা, অসাম্প্রদায়িকতার মেলা। গতবছর দুঃখজনকভাবে লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছিল মৌলবাদীরা, এর আগেও অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোপানো হয়েছিল। কিছুদিন আগেই এক প্রকাশককে হত্যা করা হয়েছে। সবকিছু মাথায় রেখেই এবার বড় পরিসরে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হবে।’

‘এদেশের মানুষ সন্ত্রাসকে পছন্দ করে না। তারা সন্ত্রাসকে প্রতিহত করছে। বইমেলা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, মুক্তচিন্তার পক্ষে, বইমেলা মানেই বিশ্বমানবতার জয়’, যোগ করেন তিনি।

গতবছর বইমেলাতেও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার কথা বলেছিল প্রশাসন। এর মধ্যেও মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হলো কীভাবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটানোর জন্য একজন মানুষই যথেষ্ট। একজন দশজনের ক্ষতি করতে পারে। গতবার হয়ত কিছু দুর্বলতা ছিল। এবার যেন সামান্যও ভুল-ত্রুটি না থাকে সে-ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ আর এজন্য সব পক্ষের সহযোগিতা চান তিনি। বলেন, ‘আর যেন কোনো দুঃখজনক পরিস্থিতি তৈরি না হয় সে-জন্য সবার সহযোগিতা আশা করছি।’

মন্ত্রী জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বইপ্রেমীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ ছাড়া ছুটির দিনগুলোতে মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

গত গ্রন্থমেলা চলা অবস্থায় ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার’ অভিযোগ এনে রোদেলা প্রকাশনীর স্টল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, "বইমেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। সেই নীতিমালার বাইরে কোনো প্রকাশনীকে মেলায় আসতে দেওয়া হবে না।"

প্রকাশকদের সঙ্গে বৈঠকে নীতিমালার বিষয়টি তাদের জানিয়ে দেওয়ার হবে বলে তিনি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি সচিব বেগম আক্‌তারী মমতাজ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ‍যুগ্ম সচিব মনজুরুর রহমান, বাংলা একাডেমির সচিব আনোয়ার হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মেলার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত