সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ২১:৫৪

বুদ্ধিজীবীরা ‘নির্বোধের মতো মারা গিয়েছিলেন’, গয়েশ্বরের ধৃষ্টতা

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুলে এবার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মৃত্যুকে ‘নির্বোধের মতো মারা গিয়েছিলেন’ আখ্যা দেওয়ার মত ধৃষ্টতা দেখালেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রিজভী আহমেদ’শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন। ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ন্যাশনালিস্ট এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।

গয়েশ্বর বলেন, ‘একাত্তরে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা পাকিস্তানের বেতন ভাতা খেয়েছে তারা নির্বোধের মতো মারা গেল। আর আমাদের মতো নির্বোধেরা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে ফুল দিই। আবার না গেলে পাপ হয়। তারা যদি এতো বুদ্ধিমান হয়, তাহলে ১৪ তারিখ পর্যন্ত নিজের ঘরে থাকেন কীভাবে?’

তিনি বলেন, ‘নেতৃত্বের অজ্ঞতা ও আগাম সতর্কতার অভাবে ২৫ মার্চ যারা মারা গেছেন, তারা না জানার কারণে মারা গেছেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চ যেসব সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে তারা পাকিস্তানিদের হামলার বিষয়ে অজ্ঞাত ছিল। কিন্তু ১৪ ডিসেম্বর যেসব বুদ্ধিজীবী নিহত হয়েছে, তারা পাকিস্তানিদের হামলা ও বর্বরতা সম্পর্কে জানতো। এমনকি শেষদিন পর্যন্ত তারা পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরি করেছেন, অফিসে গিয়েছেন এবং নিয়মিত বেতন নিয়েছেন। তাহলে তারা শহীদ হন কীভাবে?’’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘যারা পাকিস্তানের বেতন খাইল তারা হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধা, আর যারা পালিয়ে না খেয়ে বেড়াল- তারা হয়ে গেল রাজাকার। এই বিষয়গুলো পরিষ্কার করা দরকার। কারণ এগুলো এখন ডাবল ষ্ট্যাণ্ডার্ড হয়ে গেছে।’

গয়েশ্বর বলেন, ‘এখন তো আধুনিক প্রযুক্তি আছে, প্রশাসন আছে। ইচ্ছে করলেই সাত দিনের মধ্যে শহীদদের পরিসংখ্যানটি বের করতে পারি। এ কারণে আওয়ামী লীগের অজ্ঞ বুদ্ধিজীবীদের বলব, প্রধানমন্ত্রীকে বলুন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি জরিপ করে ফেলেন। তাহলে প্রকৃতচিত্র চলে আসবে।’ 

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক সময়ের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে গয়েশ্বর আরও বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) শুধু বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। তিনি তো বলেননি, ৩০ লক্ষের কম বা বেশি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছে। এই বিতর্ক কিন্তু ৯১ সালে সংসদে উঠেছিল। প্রয়াত (অব.) কর্নেল আকবর হোসেন এই প্রশ্নটি করেছিলেন। শেখ সাহেব (বঙ্গবন্ধু)হিথ্রো এয়ারপোর্টে যেটি বলেছেন সেটি তো আর বাণী নয় যে পরিবর্তন করা যাবে না। অজ্ঞতাবশত তিন লাখ, তিন মিলিয়ন হয়ে গেছে। তাড়াহুড়োর মধ্যে হয়তো এমনটি হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যতদূর জানি, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে দুই লাখ পঁচাত্তর হাজার শহীদ পরিবারের তালিকা আছে। তাহলে বাকি ২৭ লাখ কোথায় গেল? গলার জোরে কথা না বলে প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে সংখ্যা ৩০ লাখের জায়গায় ৬০ লাখ হলে ক্ষতি কোথায়? ৩ লাখ হলেও তো সমস্যা নেই। দেশ তো স্বাধীন হইছে। এটি বিতর্কের বিষয় নয়।’

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে বলে দাবি করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও আলোচনা সভায় বলেছিলেন, ‘বলা হয়, এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছে। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে, আসলে কত শহীদ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে, এটা নিয়েও বিতর্ক আছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত