নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ১০:১৭

এবার গুনে গুনে ৩০ লাখ শহীদের নাম পত্রিকায় প্রকাশের দাবি গয়েশ্বরের

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন,শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ‘নির্বোধের মতো মারা গিয়েছিলেন’ আখ্যা দেওয়ার মত ধৃষ্টতা দেখানোর পর এবার গুনে গুনে ৩০ লাখ শহীদের নাম পত্রিকায় প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে গয়েশ্বর বলেন, কে কত লাখ বলল এটা বড় কথা নয়। গুনে গুনে ৩০ লাখ শহীদের নাম পত্রিকায় প্রকাশ করুন।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রতিবাদ ও ঘৃণা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। কথায় কথায় রাষ্ট্রদ্রোহিতা; সত্য কথায় রাষ্ট্রদ্রোহিতা আর মিথ্যা কথা বলে দেশপ্রেম। এই নীতিতে বিশ্বাস করি না। সত্য যত নির্মম হোক সত্য সত্যই। ইতিহাস সঠিকভাবে লিখতে হয়। কে কত লাখ বলল এটা বড় কথা নয়। গুনে গুনে ৩০ লাখ শহীদের নাম পত্রিকায় প্রকাশ করুন। তারপরে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যত মামলা পারেন করেন। 

একই অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর আরও বলেন, তারা ৩০ লাখ হোক বা ৬০ লাখ হোক তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। তাদের তালিকা থাকবে না কেন। কি কারণে থাকবে না? এই শহীদদের নাম উল্লেখ করে এলাকায় এলাকায় স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক মামলা দায়ের প্রসঙ্গে গয়েশ্বর এ মন্তব্যের পাশাপাশি আরও বলেন, আমরা অনেক চুপ থেকেছি। কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়ার নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। নেত্রী যখন একটা কথা বললেন, আমরা তখন সবাই মুখে তালা মারলাম। তার সমর্থনে কেউ কোনো কথা বললাম না। অপরদিকে ভালো হোক মন্দ হোক শিয়ালের মতো সব এক সুরে বলে। আমাদের দুর্ভাগ্য ওই জায়গায় আমাদের নেত্রী যখন কথা বলেন, তার কথা সমর্থন করলে মামলা হবে এই ভয়ে যখন আমার সমর্থন করি না সেখানে আমাদের বিবেচনা করতে হবে বিএনপির রাজনীতি করার যোগ্যতা আমাদের আছে কিনা।

এর আগে, ২৫ ডিসেম্বর বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রিজভী আহমেদ’শীর্ষক এক আলোচনা সভায় শহীদ বুদ্ধিজীবী প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, ‘২৫ মার্চ যেসব সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে তারা পাকিস্তানিদের হামলার বিষয়ে অজ্ঞাত ছিল। কিন্তু ১৪ ডিসেম্বর যেসব বুদ্ধিজীবী নিহত হয়েছে, তারা পাকিস্তানিদের হামলা ও বর্বরতা সম্পর্কে জানতো। এমনকি শেষদিন পর্যন্ত তারা পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরি করেছেন, অফিসে গিয়েছেন এবং নিয়মিত বেতন নিয়েছেন। তাহলে তারা শহীদ হন কীভাবে?’’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘যারা পাকিস্তানের বেতন খাইল তারা হয়ে গেল মুক্তিযোদ্ধা, আর যারা পালিয়ে না খেয়ে বেড়াল- তারা হয়ে গেল রাজাকার। এই বিষয়গুলো পরিষ্কার করা দরকার। কারণ এগুলো এখন ডাবল ষ্ট্যাণ্ডার্ড হয়ে গেছে।’

তার সে বিতর্ক দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয় এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অপমান করার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের আগে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ‘মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে’ খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। আজকে বলা হয়, এতো লাখ লোক শহীদ হয়েছে। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ না করে খালেদা জিয়া দাবি করেন, ‘তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না’।

এ নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে এবং এ মামলার সমনও জারি হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত