সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ মার্চ, ২০২৪ ১৯:৪৩

অনিয়ম করে হলেও নির্বাচনের খরচ তোলার প্রকাশ্য ঘোষণা দিলেন নাটোরের এমপি

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ্যে দুর্নীতি করার ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনে খরচ হওয়া ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা যেভাবেই হোক তোলার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এটুকু করতে যদি কোন অনিয়ম করতে হয় সেটাও করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন এই এমপি।

সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদের বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে। এনিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে একাধিক গণমাধ্যমও।

বক্তব্যে মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার পাঁচটা বছরের (২০১৪-২০১৮) বেতন ভাতার টাকা ছাড়া আমার কোনো সম্পদ ছিল না। আগামীতেও থাকবে না। এবার (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে) ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা আমি তুলব। যে ভাবেই হোক তুলবই। এতটুক অনিয়ম আমি করবই। এটুকু অন্যায় করব, আর করব না।

তিনি আরও বলেন, ওই সময় এক টাকাও খরচ হয়নি আমার। শুধু ব্যাংকে ২৫ লাখ টাকা জমা রাখতে হয়, ওটা রেখেছি। এক টাকাও খরচ নাই, ২৫ লাখ টাকা তুললাম। ট্যাক্স ফ্রি ২৭ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছিলাম। চাইলে ১ কোটি টাকা দিয়ে কিনতে পারতাম। আমার যখন টাকা নাই তখন ২৭ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। এবার আমি কিনব, ওই টাকা দিয়ে কিনব। ওই যে টাকা, ওই টাকা তুলে নিব আমি। খালি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা তুলব।

গত মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) লালপুর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতার পরে গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। উনার বক্তব্যে (সংসদ সদস্য) উনি বলেছেন, এটাতে আমার কোনো কথা নেই।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ পরে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ওটা এমন কিছু না। বক্তব্য দেয়ার সময় মজা করে আমি কথাটা বলেছি। ওটা সিরিয়াস কোনো কথা নয়।’

তার দাবি, আমার বক্তব্যে এটা বোঝাতে চেয়েছি যে অনেকেই এ রকম করে। আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি নাটোর জেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে একজন সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য খুব দুর্ভাগ্যজনক। তার (সংসদ সদস্যের) এমন বক্তব্যে তার সহকারী এবং দলীয় নেতাকর্মীরা দুর্নীতিতে উৎসাহিত হবেন। এটা একদিকে যেমন পরিষ্কারভাবে শপথের লংঘন অন্যদিকে নির্বাচনী বিধিরও লংঘন। নির্বাচনী ব্যয় অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেন না। সংসদ সদস্যের কাছে গঠনমূলক বক্তব্যেরও প্রত্যাশা করি।

আবুল কালাম আজাদ নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তিনি নাটোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মমতাজ উদ্দিনের ছোট ভাই। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার মমতাজ উদ্দিনকে ২০২৩ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করে। 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন আবুল কালাম আজাদ। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ৫৮ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচিত হন আবুল কালাম আজাদ। তার প্রতীক ছিল ঈগল।

আবুল কালাম আজাদ পান ৭৭ হাজার ৯৪৩ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম বকুল (নৌকা) ৭৫ হাজর ৯৪৭ ভোট। তাদের ভোটের ব্যবধান ১ হাজার ৯৯৬ ভোট। এছাড়াও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও নাটোর জেলা শাখার সভাপতি, উত্তরবঙ্গ আখচাষী সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খলিল (হাতুড়ি) পান ৩ হাজার ৪৩০ ভোট; আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মো. রমজান আলী সরকার (কাঁচি) পান ২ হাজার ৬১৪ ভোট; জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার মো. আশিক হোসেন (লাঙ্গল) পান ২ হাজার ৩৬ ভোট; আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কাজল রায় (ঢেঁকি) পান ১ হাজার ১৩৬ ভোট; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের (ইনু) ইঞ্জিনিয়ার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (মশাল) পান ৮১৭ ভোট; জাসদ স্বতন্ত্র মো. জামাল উদ্দিন ফারুক (ট্রাক) পান ৪৬৮ ভোট এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) মো. লিয়াকত আলী (একতারা) পান ৪৫১ ভোট।

ভিডিও : একাত্তর টেলিভিশনের সৌজন্যে

আপনার মন্তব্য

আলোচিত