সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১৯:০১

কেএনএফের ‘প্রধান সমন্বয়ক’ গ্রেপ্তার

বান্দরবানে ১৬ ঘণ্টা ব্যবধানে শতাধিক সশস্ত্র সদস্য নিয়ে তিনটি ব্যাংক শাখায় হামলা, অর্থলুট ও অপহরণের মাধ্যমে ‘নিজেদের সক্ষমতা জানান দেওয়ার’ পর কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফের এক সদস্যকে তার বাড়ি থেকেই গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

চেউসিম বমকে সংগঠনটির ‘প্রধান সমন্বয়ক’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর র‌্যাব জানায়, রোববার সকালে সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়াডের্র শ্যারন পাড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিকাল সাড়ে ৩টায় জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১৫ এর কমান্ডার এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “চেউসিম বমকে তার বাড়ির একটা লোহার লকারে পাওয়া গেছে। তিনি সেখানে লুকিয়ে ছিলেন। সেটা বাইরে থেকে তালা দেওয়া ছিল। তালা ভেঙে তাকে বের করা হয়।”

শ্যারন পাড়াটি সুয়ালক ইউনিয়নে পড়লেও এর অবস্থান মূলত বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের পাশে; যার দূরত্ব জেলা সদর থেকে আনুমানিক ৮-৯ কিলোমিটার হবে।

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে এই সশস্ত্র সংগঠনের অস্তিত্ত্ব প্রকাশ্যে আসে ২০২২ সালের শুরুর দিকে। বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, খুমি ও ম্রোদের নিয়ে এ সংগঠন গঠন করার কথা বলা হলেও সেখানে বম জনগোষ্ঠীর কিছু লোক রয়েছে। সে কারণে সংগঠনটি পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিতি পায়।

কেএনএফ বলছে, রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাইছড়ি বিলাইছড়ি ও বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদমসহ নয়টি উপজেলা নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ গঠন করতে চায় তারা।

সশস্ত্র সংগঠনটি অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে ২০২২ সালে খবর দেয় র‌্যাব।

কেএনএফের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে পাহাড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়লে ২০২৩ সালের ৩০ মে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠিত হয়। ওই বছরের জুলাই ও অগাস্টে কমিটির সঙ্গে কেএনএফের দুইবার ভার্চুয়াল আলোচনাও হয়।

পরে ৫ নভেম্বর রুমা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মুনলাই পাড়ায় প্রথমবারের মত কেএনএফের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সরাসরি দুটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে প্রথমবারের মত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

‘শান্তি আলোচনা’ শুরুর পর পাহাড়ে হত্যা-সহিংসতা থেকে মুক্তির আশা জাগতে শুরু করেছিল পাহাড়ের মানুষের মনে। এরইমধ্যে ২ ও ৩ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা এবং থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র লোকজন।

তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে এবং এক ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। লুট করে বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলি।

দুটি ঘটনাতেই কেএনএফ এর নাম আসার পর ৪ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয় সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া আর ‘সম্ভব নয়’।

এরমধ্যে শনিবার রুমা ও বান্দরবান পরিদর্শন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “কোনো অবস্থায় পার্বত্য এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে দেওয়া যাবে না। যেকোনো মূল্যে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।”

পরদিন রোববার হেলিকপ্টারে বান্দরবানে এসে রুমা ও থানচির পরিস্থিত ঘুরে দেখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, “আমরা এখন সরকারের ওভারঅল স্ট্র্যাটেজি, অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে যেভাবে এটা সরকার চিন্তা করেছে, বাংলাদেশ সরকারের সমস্ত অর্গান, আমাদের সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, এবং অন্যান্য ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন, সব সমন্বিতভাবে আমরা এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করব।

“বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে দায়িত্বগুলো পালন করার, বিশেষ করে যৌথ অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া, সেইগুলো আমরা অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে করতে পারব বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত