সিলেটটুডে ডেস্ক

১৪ আগস্ট, ২০২৫ ১২:৩৫

বাংলাদেশের নাগরিক স্পেস ‘দমনমূলক’: সিভিকাস মনিটরের পর্যবেক্ষণ

বৈশ্বিক নাগরিক সমাজ জোট সিভিকাসের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত এক বছরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিক স্পেস রক্ষায় কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, মানবাধিকার, সাংবাদিকদের সুরক্ষা, এবং জবাবদিহিতা জোরদারে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। এতে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের উপর নিষেধাজ্ঞা ও হয়রানি বন্ধ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

সিভিকাস মনিটরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার বিক্ষোভকারীদের মুক্তি, মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (OHCHR) তদন্তকে সহায়তা করেছে। এই সময়ে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছিল। এছাড়া, বাংলাদেশ জোরপূর্বক গুম প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে এবং শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত গুমের ঘটনা তদন্তে একটি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এসব পদক্ষেপের কারণে সিভিকাস মনিটর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের নাগরিক স্পেসের মর্যাদা ‘দমনমূলক’ হিসেবে উন্নীত করেছে।

তবে, সিভিকাস মনিটরের প্রতিবেদনে বেশ কিছু উদ্বেগজনক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর সংস্কার বা ২০১৬ সালের ফরেন ডোনেশন (ভলান্টারি অ্যাক্টিভিটিস) রেগুলেশন অ্যাক্ট সংশোধনে কোনো অগ্রগতি হয়নি, যা পূর্বে সমালোচনামূলক সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক তহবিল সীমিত করতে ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া, নতুন সাইবার প্রোটেকশন অর্ডিন্যান্স আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং পেনাল কোডের মানহানিকর বিধানগুলো এখনও বহাল রয়েছে।

পুলিশ সংস্কারও স্থবির হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের ভেঙে দেওয়ার আহ্বান সত্ত্বেও বিতর্কিত র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (RAB) অক্ষত রয়েছে। এছাড়া, বিরোধী আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম অ্যান্টি-টেররিজম অ্যাক্টের অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদের সমর্থকদের লক্ষ্য করে হয়রানি করা হচ্ছে।

সিভিকাসের এশিয়া প্যাসিফিক গবেষক জোসেফ বেনেডিক্ট বলেন, “গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিক স্পেসের অবনতি রোধে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, নাগরিক সমাজের জন্য সক্ষম পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং মানবাধিকার কর্মীদের সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচনের আগে বিরোধীদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধ বন্ধ করতে হবে।”

সিভিকাস সরকারের প্রতি আইসিসিপিআর-এর অধীনে মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন বা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া, পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গঠন এবং র‍্যাব ভেঙে দেওয়ার জন্য সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সিভিকাস মনিটর বিশ্বের ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলে নাগরিক স্বাধীনতার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। এটি সমাবেশ, মতপ্রকাশ, এবং সংগঠনের স্বাধীনতার উপর ভিত্তি করে নাগরিক স্পেসকে ‘বন্ধ,’ ‘দমনমূলক,’ ‘বাধাগ্রস্ত,’ ‘সংকীর্ণ,’ বা ‘উন্মুক্ত’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত