সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ২১:১৬

কোনো দেশে বিচারপতিদের প্রেস কনফারেন্সের নজির নেই

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম সামসুদ্দিন চৌধুরীর সোমবারের প্রেস কনফারেন্স প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আমাদের কোনো প্রাক্তন বিচারপতির এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়, যে বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিচার বিভাগ সম্পর্কে অন্যরকম ধারণা হতে পারে। কারণ একজন সাধারণ মানুষ বিচারপতিকে অনেক ওপরে স্থান দিয়ে বিচার-বিবেচনা করেন। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির নেই যে বিচারপতিরা প্রেস কনফারেন্স করেন।


মাহবুবে আলম বলেন, এতে আমাদের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে এবং যিনি করবেন তার উচ্চ ভাবমূর্তিও থাকবে না।

সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিচারপতিরা যখন বিচারালয়ে আসেন তখনও তারা রায় বাসায় গিয়েই দেন। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হলো, অনেকগুলো রায় কেন জমা থাকবে। এটা কোনোমতেই কাম্য নয়। কোনো জরুরি মামলা থাকলে সেই মামলার রায় দিতে হয়তো দেরি হতে পারে। কিন্তু সাধারণ এক-দেড়শোটা মামলায় কেন রায় না দেওয়া থাকবে।

প্রধান বিচারপতি 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্য' নিয়ে কাজ করছেন মন্তব্য করে তার পদত্যাগ দাবি করে সোমবার দুপুর ৩টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের বাইরে হাইকোর্ট মাজার গেটের পাশের সড়কে সংবাদ সম্মেলন করেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম সামসুদ্দিন চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনের পরপরই হাতে লেখা ৬৫টি মামলার রায় ও আদেশের ফাইল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জমা দেন তিনি। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী সামসুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে মামলার ফাইলগুলো গ্রহণ করেন।

এর আগে গত রোববার মামলার ফাইল ফেরত চেয়ে ওয়েবসাইটে 'প্রেস বিজ্ঞপ্তি' দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বরাত দিয়ে বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরীকে তার কাছে থাকা অনিষ্পত্তিকৃত মামলার ফাইল অতি সত্বর ফেরত দিতে বলা হয়; যাতে বিচারপ্রার্থীদের আর ভোগান্তি না হয়। এর পর সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ৬৫টি মামলার ফাইল জমা দেন অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি।

এদিকে সোমবার সকালে হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুমতি ছাড়া সব ধরনের সংবাদ সম্মেলন আইনত দণ্ডনীয়। উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকে অনেক আগে থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সাব্বির ফয়েজ বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোর্ট চত্বরে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন করা যায় না। তবে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন ও প্রাঙ্গণ এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রয়েছে। হঠাৎ করে এ ঘোষণা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি স্মরণ করে দিতে এটা বলা হচ্ছে। এর পর বিষয়টি বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরীর নজরে নেওয়া হলে তিনি দুপুর ৩টার দিকে হাইকোর্ট মাজার গেটের পাশের রাস্তায় সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করে সামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, "প্রধান বিচারপতি বিচারাঙ্গনকে বিতর্কিত করে চলছেন। রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে খালেদা জিয়ার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। কারণ 'অবসরের পর বিচারপতি রায় লিখতে পারবেন না'- এটি বহু আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন। প্রধান বিচারপতিও এখন সেই কথা বলছেন। তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। এর আগে তিনি (প্রধান বিচারপতি) বলেছেন, সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে। মানুষের কাছে সরকারের জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য তিনি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আমি মনে করি বিচার বিভাগের মর্যাদার স্বার্থে তার অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।"

গত বছরের ৩১ অক্টোবর অবসরে যান আপিল বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। অবসরে যাওয়ার পর তার কাছে রায় ও আদেশ লেখার জন্য থাকা মামলার ফাইল চেয়ে একাধিক চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এর জবাবে কয়েক দফা পাল্টা চিঠিও দেন তিনি (শামসুদ্দিন চৌধুরী)। এরপর প্রধান বিচারপতি পদে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ১৯ জানুয়ারি দেওয়া এক বাণীতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, কোনো কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী। তার এই বক্তব্যের সূত্র ধরে পরে আইন অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত