সিলেটটুডে ডেস্ক

২২ মার্চ, ২০১৬ ১২:১৫

বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরি : তদন্তে শ্রীলঙ্কা যাবে সিআইডি

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির তদন্ত করতে শিগগিরই শ্রীলংকা যাচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল। ওই অর্থ চুরির বিষয়ে তদন্ত দলটি শ্রীলংকার প্যান এশিয়া ব্যাংকিং কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবে।

আগামী সপ্তাহে সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি থাকলেও সফরের চূড়ান্ত দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। এদিকে গতকাল সোমবারও সিআইডি বাংলাদেশ ব্যাংকে তদন্ত চালিয়েছে। তারা ব্যাংকের ডিলিং রুমের দায়িত্ব পালনকারী বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন।

সিআইডির ডিআইজি সাইফুল আলম বলেন, অর্থ চুরির ঘটনায় সিআইডির টিম তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। গতকালও তদন্ত দল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছে। শিগগিরই তাদের একটি টিম শ্রীলংকা যাবে।

সিআইডি সূত্র জানায়, অর্থ চুরিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কেউ জড়িত কি-না, তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত দলটি। তবে চুরির সময় ডিলিং রুমে দায়িত্ব পালনকারী বেশ কয়েকজনের ওই সময়কার কার্যক্রম সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। ওই সূত্রটি জানায়, ডিলিং রুমে সুইফট সিকিউরিটি সিস্টেমে প্রবেশের ক্ষেত্রে তিনটি ধাপ পার হতে হয়। দায়িত্বরত তিন কর্মকর্তার মধ্যে কার কোন ধাপ তা একজন অপরজনেরটা জানার কথা নয়। অবশ্য তদন্তে দেখা গেছে, সেই সিকিউরিটি সিস্টেমে ডিলিং রুমে দায়িত্বরত ১০ জনই তিনটি ধাপ সম্পর্কে অবগত ছিলেন। এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। সংশ্লিষ্টদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ হেল বাকী বলেন, মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে এ পর্যন্ত তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্ধশত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য পেয়েছেন। কোনো তথ্যে অসংলগ্নতা থাকলে সংশ্লিষ্টদের আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, মামলার এজাহার অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে গচ্ছিত মার্কিন ডলার থেকে পাঁচটি সুইফটবার্তার মাধ্যমে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এর মধ্যে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে চারটি বার্তায় মোট ৮১ মিলিয়ন ডলার পাচার হয়। অপর একটি বার্তায় শ্রীলংকার প্যান এশিয়া ব্যাংকিং কর্পোরেশনে ২০ মিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে যায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের 'স্টপ পেমেন্ট রিকোয়েস্টে'র মাধ্যমে শ্রীলংকা থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার ফেরত আনা হয়। রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে 'স্টপ পেমেন্ট রিকোয়েস্ট' পাঠালেও ওই অর্থ আটকে রাখা সম্ভব হয়নি। এ জন্যই শ্রীলংকা ও ফিলিপাইনে ব্যাংক দুটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চায় সিআইডি।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, শ্রীলংকার প্যান এশিয়া ব্যাংকিং কর্পোরেশনে কীভাবে ২০ মিলিয়ন ডলার পাচার হলো এবং ব্যাংকটি তা আটকাতে সক্ষম হলো, তা জানা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকার বিষয়টিও সেখানকার কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে চায় তদন্ত কমিটি। শ্রীলংকার ব্যাংকটি পাচার হওয়া অর্থ আটকাতে পারলেও ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক তা পারল না কেন, তা জানতে শ্রীলংকার ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবে সিআইডি। এ জন্যই তদন্ত দলটি শ্রীলংকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার আগে দেশে আরও কিছু বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নিতে চায় তদন্ত দলটি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, সিআইডি ইতিমধ্যে মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) এক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছে। ইন্টারপোলের সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থার সহায়তা নিয়েই তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চায় সিআইডি।

সূত্র : সমকাল

আপনার মন্তব্য

আলোচিত