সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ মার্চ, ২০১৬ ১৬:৫২

বাঁচতে চান বাউল শিল্পী পাগল বাচ্চু

বাউল কবি, সুরকার ও শিল্পী পাগল বাচ্চুকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন শিল্পীর পরিবারের সদস্যরা।
 
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাউল তরী’র ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
 
শিল্পী পাগল বাচ্চু ১৯৬৪ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে অর্ধশতাধিক বছর ধরে গান করে আসছেন।
 
শিল্পীর ছেলে মো. আরফিন শাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার বাবা সারাটা জীবন এদেশের মাটি ও মানুষের জন্য গান রচনা, সুর দেওয়া ও গান গেয়ে গেছেন। বিশেষ করে বাউল গানের প্রসারে কাজ করেছেন। আমার বাবাকে শিল্পী জগত এক নামে চেনে। 
 
তিনি বলেন, আমার বাবা ৯ বছর বয়স থেকে সংগীত পরিবেশন করে আসছেন। গান শিখতে তিনি যান ভারতের গৌহাটিতে। সেখানে টিলোটিয়া পাহাড়ে তার আধ্যাত্মিক গুরুর কাছে সাড়ে ৪ বছর তালিম নেন। এরপর বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে গান গাওয়া শুরু করেন।
 
মো. আরফিন শাহ আরো বলেন, আমার বাবা এক হাজারের বেশি গানের গীতিকার। তার গানের বই ছয় খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। আমার বাবা গানের সুরে মুগ্ধ হয়ে শ্রোতারা তাকে ‘গানের রাজা’ উপাধি দিয়েছেন। শুধু দেশে নয় লন্ডন, দুবাই, পাকিস্তান ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে তিনি গান পরিবেশন করেছেন।
 
তার উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে, ‘ঐরুপ তোমার ঝলক মারিয়া পাগল করলি আমারে’ ‘এতো জ্বালা দিলি বন্ধু সইতে না পারি’। গান পরিবেশন করে তিনি কোনোদিন বিনিময় চায়নি।
 
তিনি আরো বলেন, শেষ জীবনে তিনি শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, হাঁপানি, ডায়াবেটিকসহ জটিল রোগে ভুগছেন। গত এক বছর ধরে তিনি উত্তরার শিন শিন জাপান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা চার ভাই, তিন বোন। উত্তরায় ছোট্ট একটি বাড়ি ছাড়া সম্পদ বলতে কিছুই নেই। গান পরিবেশনে ভক্তরা খুশি হয়ে যা দিতেন তা দিয়ে সংসার চলতো। গত এক বছরে বাবার চিকিৎসায় ধার দেনা করে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। বর্তমানে আমরা নি:স্ব। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাবাকে সুস্থ করে তুলতে হলে আরও ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। 
 
শিল্পীর স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাগল বাচ্চুকে খুবই ভালোবাসতেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু গীতিকার আবদুল লতিফকে বাউল শিল্পীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। শিল্পীদের বেতন-ভাতা সরকার দেবে বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আর তা হয়ে উঠেনি।
 
স্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য এ শিল্পী আজ চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুশয্যায়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার পিতার স্নেহধন্য এ শিল্পীকে বাঁচাতে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন জানাই। 

উল্লেখ্য,পাগল বাচ্চু এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। বাউল সম্রাট পাগল বাচ্চুর পুরো নাম মোঃ পাগল বাচ্চু ওরফে চান শাহ। পাগল ও চান শাহ্ নাম তার আধ্যাত্মিক গুরুর দেওয়া। তার পিতা মরহুম রহম আলী শাহ  ও মাতা মরহুমা আয়তুন নেছা। পাগল বাচ্চুরা চার ভাই ও এক বোন। তার সংগীত জগতে হাতে খড়ি পিতার নিকট থেকে। পিতা রহম আলী শাহ ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ। সাত বছর বয়স থেকেই পাগল বাচ্চুর গানের জগতে প্রবেশ। এছাড়া তার ছোট ভাই পাগল মনির একজন জনপ্রিয় বাউল শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত