নিউজ ডেস্ক

০১ এপ্রিল, ২০১৬ ১০:৫৫

ইউপি নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ : দেশজুড়ে সহিংসতায় নিহত ৯

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপেও সহিংসতার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে সহিংসতা ঠেকাতে নানা পদক্ষেপের কথা বলা হলেও ভোট চলাকালে এক শিশুসহ অন্তত নয়জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। প্রথম ধাপের মতোই অনিয়ম আর কারচুপিতে ম্লান হয়ে গেছে তৃণমূলের এই ভোট উৎসব। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে তিনজন এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জ এক শিশু, যশোরে একজন, মানিকগঞ্জে এক নারী, নাটোরে একজন, জামালপুরে একজন ও মাদারীপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে ৪৪ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। ভোলায় এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার আফজাল হোসেনকে পায়ে গুলি করে পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার ৬৩৯ ইউপিতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট নেওয়া হয়। দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের এই নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ ১৭টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীরা ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেন। প্রথম ধাপের মতো এ ধাপেও আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বেশির ভাগ ইউপিতে বিজয়ী হয়েছেন। তবে ভোট শুরু হওয়ার পর পরই অনেক স্থানে বিএনপি মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।

ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর পরই বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ইসিতে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। গতকালের ভোটে সারাদেশের ৩৩ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে ইসি। এই ধাপেও ৩১ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ মনোনীতরা আগেই বিজয়ী হয়েছেন। এর আগে গত ২২ মার্চ প্রথম ধাপের ৭১২ ইউপিতে ভোট নেওয়া হয়। ওই ভোটের আগে-পরে মিলিয়ে ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।

ভোট শেষ হওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, প্রথম ধাপের ঘটনার আলোকে ইসির পক্ষ থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন মোটামুটি ভালো হয়েছে। তবে এই কয়েকটি ঘটনাই সামগ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থাকে ম্লান করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ভোটের দিনের সহিংসতায় জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, এই নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার সুযোগ নেই। হাতেগোনা কয়েকটি কেন্দ্র ছাড়া সব কেন্দ্রেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেছেন, এত প্রাণহানির পরও সিইসি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি খারাপ নির্বাচনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।

এদিকে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়। ভোটের আগের রাতেই যশোর জেলা পুলিশ সুপারের কাছে এই চিঠি পেঁৗছানো হয় বলে জানিয়েছেন ইসি কার্যালয়ের উপ-সচিব সামসুল আলম। তিনি বলেন, শাহীন চাকলাদারের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করতে ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পুলিশের গুলিতে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাউরিয়া ইউনিয়নে তিনজন, মাদারীপুরে একজন, দু'পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে যশোরের চাঁচড়া ইউনিয়নে একজন এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের হযরতপুরে প্রাণ গেছে এক শিশুর। জামালপুরের মেলান্দহে কেন্দ্রের বাইরে ধাওয়া-পল্টা ধাওয়ার সময় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি প্রাণ হারান। লালপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় এক বিএনপিকর্মী ও মানিকগঞ্জে বিজয়ী মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় নিহত হয়েছেন এক নারী। ভোটের আগের রাতে যশোর সদরের লেবুতলা ইউনিয়নে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে দুই যুবকের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে পুলিশ।

প্রার্থীদের সমর্থকদের সংঘর্ষে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে ভোলা সদরের রাজাপুর ইউনিয়নেও। এতে সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আরিফপুর ইউনিয়নে একটি কেন্দ্রের বাইরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আদ্রা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চাচার বাড়ি থেকে ১৫টি হাতবোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই প্রার্থীর ছেলেসহ ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে।

যশোর সদরের চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে সিল মারার ঘটনার জের ধরে তিনজন সাধারণ সদস্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় আটক করা হয়েছে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ চারজন।

ইসি কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গতকাল দ্বিতীয় ধাপে ৪৭ জেলার ৬৩৯ ইউপিতে ভোট নেওয়া হয়। এতে ভোটকেন্দ্র ছিল ছয় হাজার ২০৫টি ও কক্ষ ছিল ৩২ হাজার ২১টি। চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী ছিল দুই হাজার ৬৬২ জন। এর মধ্যে ১৭টি রাজনৈতিক দলের এক হাজার ৪৯৩ জন ও স্বতন্ত্র এক হাজার ১৬৯ জন। সাধারণ সদস্য পদে ২১ হাজার ২৫৯ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ছয় হাজার ৪৯৮ জন প্রার্থী ছিলেন। গতকাল ৬৩৯ ইউপিতে ভোটার ছিল এক কোটি ১২ লাখ ১২ হাজার ৩৩৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ২৩২ জন ও নারী ৫৫ লাখ ৮৪ হাজার ৭০৭ জন।

চট্টগ্রাম :বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সন্দ্বীপ উপজেলার বাউড়িয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চর বাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কিছু আগে দুই মেম্বার প্রার্থী শাহেদ ও জালালের সমর্থকরা কেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করে। এ সময় দু'পক্ষের মধ্যে সংষর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। তারা হলেন_ সানাউল্লাহ (২৫), ইব্রাহিম (৩২) ও জামাল (৩৭)। এ সময় সমর্থকদের পাল্টা গুলিতে আল আমিন নামে এক পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আহত হন আরও অন্তত ২০ জন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে আরও ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

তিনজন নিহত হওয়ার বিষয় স্বীকার করে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে গুলি চালায় পুলিশ। এ সময় উভয়পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন।'


ঢাকা : সকাল সাড়ে ১০টা। কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নের কালীগঙ্গা নদীর তীরে মধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। কেন্দ্রের ২০০ গজ দূরেই স্কুলছাত্র শুভ কাজীর বাড়ি। উৎসাহী শিশু মা-বাবার সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে যায়। মা-বাবা কেন্দ্রে ঢুকলে শুভ আরও কয়েকজন শিশুর সঙ্গে দায়িত্বে থাকা পুলিশের আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল। হঠাৎ কেন্দ্রের পূর্বদিক থেকে মুহুর্মুহু গুলি আসতে থাকে। লোকজন দিগ্গি্বদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এরই মধ্যে একটি গুলি শুভর শরীরে এসে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। তাকে উদ্ধারে লোকজন ভয়ে কাছে যেতে পারেনি। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় দ্বিতীয় শ্রেণীর এই ছাত্র। ১০ মিনিট ধরে চলা এ তাণ্ডবে পুলিশও হকচকিয়ে যায়। নিহতের বাবা হালিম কাজী অভিযোগ করে বলেন, যারা গুলি করেছে তাদের বুকে নৌকা প্রতীকের কার্ড ঝোলানো ছিল। সন্তান হত্যায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের দায়ী করেন তিনি।

যশোর: সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নে ৬৫ নম্বর চাঁচড়া ভাতুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা ও সংঘর্ষে আবদুস সাত্তার নামের এক ফেরিওয়ালা নিহত হয়েছেন। যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, বেলা ১১টার দিকে চাঁচড়া ইউনিয়নের ভাতুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট চলাকালে মেম্বার প্রার্থী বিল্লাল ও শান্তির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। এক পর্যায়ে দু'পক্ষের গোলাগুলি শুরু হলে বাইরে ঝুরিভাজা বিক্রেতা আবদুস সাত্তার বিশে (৬০) মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

মানিকগঞ্জ : দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী বিজয়ী তোতা মিয়ার সমর্থকরা রাত সাড়ে ৮টার দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় পরাজিত প্রার্থী শিপন শেখের সমর্থক ইমাম শেখের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারা যান ইমাম শেখের স্ত্রী নমেছা বেগম (৫০)। আহত হন ইমাম শেখ, তার ছেলে আমিনুর শেখ, হাবু শেখ, মেয়ে কমলা ও শিল্পী। আহতদের উদ্ধার করে উথলী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। দৌলতপুর থানার ওসি নাজমুল নিশাদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

নাটোর : বিপ্লব ওরফে এমরান তার বড় ভাই রেন্টু ও ছোট বোন মিতার সঙ্গে দুপুরে হাবিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। পথে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইসহাক আলীর সমর্থকরা তাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়। এ সময় প্রতিবাদ জানালে তাদের বেধড়ক মারধর করা হয়। এতে তিন ভাইবোন আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিপ্লবকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে সিডিএম হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হলে রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। নিহত বিপ্লব উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের সাজেদুর রহমানের ছেলে।

জামালপুর : পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তর বালুরচর কেন্দ্রের বাইরে দুই মেম্বার প্রার্থী ওয়াহেদ আলী ও মুকছেদ আলীর সমর্থকদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা রাকিবুল মাটিতে পড়ে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। রাকিবুল ওয়াহেদ আলীর সমর্থক। তবে তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই বলে জানিয়েছেন এসপি নিজাম।

মাদারীপুর : মাদারীপুরে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় পুলিশের গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নে দক্ষিণ বীরাঙ্গল গ্রামে সংঘর্ষে সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের বীরাঙ্গল গ্রামের বাচ্চু মৃধার ছেলে সুজন মৃধা নিহত হন। সুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। নিহতের পরিবারের দাবি, পুলিশের গুলিতে সুজন নিহত হয়েছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন বলেন, সংঘর্ষের সময় কোন পক্ষের গুলিতে নিহত হয়েছে, তা জানি না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি গুলি ছুড়ছে কি-না, তদন্তের পর জানা যাবে।

কক্সবাজার : সরকারি দলের প্রার্থীর সমর্থকরা বিভিন্ন কেন্দ্র দখল নেওয়ার সময় ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। জিএমসি কেন্দ্রে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াসউদ্দিন, আবুল শামা কেন্দ্রে ঢুকে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারার চেষ্টা করলে হেনাউল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে বিএনপির লোকজন বাধা দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতারা বাবুলকে মারধর করে। মগনামা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে সিল মারার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলেন দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট। চকরিয়া জিঅ্যান্ডজি ইনস্টিটিউটে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন।

নোয়াখালী : কোম্পানিগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নের নয়টি কেন্দ্রে স্থানীয় মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পাঁচজন আহত হয়েছেন।

ব্রা?হ্মণবাড়িয়া : নবীনগরের তিনটি কেন্দ্রে সংঘর্ষে পুলিশের রাবার বুলেটে তিনজন আহত হয়েছেন। তাদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের জাফরপুর ও বাসিতপুর কেন্দ্রে নৌকার এজেন্টরা বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

কুমিল্লা : ব্যাপক কারচুপি, জালভোট ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে সব প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

চাঁদপুর :দুই উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের কয়েকটি কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীদের এজেন্ট ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে মারধর, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, জাল ভোট, কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে নানা গোলযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে সদর উপজেলার ছয়টি এবং হাইমচরেরর নয়টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়েছে। এসব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কমপক্ষে ৮০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

ভোলা : সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা প্রভাব বিস্তার করতে গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল জুলহাসের শটগানের গুলিতে এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার আফজাল হোসেন বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে দ্রুত সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা এসআই শাহিন জানিয়েছেন, অসাবধানতাবশত 'মিস ফায়ার' হয়েছে। এ ছাড়া একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড কেন্দ্রে সংঘর্ষে জাকির, বাগন আলী, আ. রশিদ, মাকসুদ, তাছলিমা ও মাজেদ গুলিবিদ্ধ হন। বিক্ষিপ্ত আরও কয়েকটি ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ১৫ জন। ২নং ইলিশা ইউনিয়নে ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে ২নং ইলিশা ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন।

ঠাকুরগাঁও : হরিপুর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের দেহট্ট-ভবানন্দপুর সরকারি বিদ্যালয় ও ভোররা হাফেজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কয়েকজন যুবক ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে ব্যালট ও ব্যালটবাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়। রানীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের বালঞ্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন।

সুনামগঞ্জ : ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের ধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই পক্ষের সংঘর্ষে চারজন গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত সাইফুল ইসলাম ও জুনেদ আহমদকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শেরপুর : শ্রীবরদী সদর ইউনিয়নে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দু'জন আহত হয়েছেন। কুড়িকাহনিয়া, গড়জরিপা ও সিংগাবরুনা ইউনিয়নে তিন প্রিসাইডিং অফিসারকে পিটিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা।

সিরাজগঞ্জ : কাওয়াকোলা, মেছড়া, খোকশাবাড়ি ও বহুলী ইউনিয়নের বেশ ক'টি কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই ও জাল ভোট প্রদানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে ৩০ জন গুলিবিদ্দসহ কমপক্ষে অর্ধশত আহত হন।

কুষ্টিয়া : দৌলতপুর উপজেলায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে ১৪টি ইউনিয়নের ১৩৫টি কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নে অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন।

ময়মনসিংহ : তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের মাইজপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজহারুল ইসলাম ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুর রউফের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে পুলিশ শটগানের গুলি ছোড়ে। এতে সিরাজ মহুরি ও আব্দুল খালেক নামে দু'জন গুলিবিদ্ধ হয়। রাত সোয়া ৯টার দিকে গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারি ইউনিয়নের কাকিয়ারচর কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়।

টাঙ্গাইল : ভুঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের ৪৫নং ভারই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার সময় পুলিশ স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান পলাশ, তার মা সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াজেদা সালাম পপি, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আবদুল হামিদ ভোলাসহ ১০ জনকে আটক করে।

এদিকে কুষ্টিয়া, ঠাকুরগাঁও, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, পঞ্চগড়, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জে প্রার্থীদের ভোট বর্জন, কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপার ছিনতাই ও দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

খবর: সমকাল অনলাইন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত