সিলেটটুডে ডেস্ক

৩১ জুলাই, ২০১৬ ০০:৫৭

‘রহস্যমানব’ হাসনাত কোথায়?

ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার সময় রহস্যমানব হাসনাত করিম এখন কোথায়? জঙ্গি হামলার সময়ে তিনি জঙ্গিদের সহযোগিতা করেছিলেন, নাকি তিনি নিজেও জিম্মি ছিলেন; আবার জিম্মি থাকলে কীভাবে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে যান- এ নিয়ে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এ প্রশ্নের কোনও সুস্পষ্ট উত্তর এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে পাওয়া যাচ্ছে না এবং সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন ধরণের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস মিনিস্টার নাদিম কাদির বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের নিউজ আওয়ার অনুষ্ঠানে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, হাসনাত করিমকে দুই-তিন সপ্তাহ আগে ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও এর আগে গত মঙ্গলবার সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছিলেন, হাসনাত করিম এখনো আটক আছেন এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হাসনাত করিম ব্রিটেন এবং বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক। তিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করলেও কিশোর বয়সে লন্ডনে চলে যান। লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি প্রকৌশল বিদ্যায় গ্রাজুয়েশন করার পর লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন। এরপর কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পর তিনি বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন গত দশকের শুরুর দিকে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় কমান্ডো অভিযান শুরুর কিছু আগে জঙ্গিরা হাসনাত করিম এবং তার পরিবারকে ছেড়ে দেয়। তবে এর পর থেকেই তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন।

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হাসনাত করিমের স্ত্রী শারমিনা পারভিন জানিয়েছেন, শেষ বার স্বামীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয় ১৩ই জুলাই। তিনি জানান, সেসময় হাসনাত করিমকে খুবই বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। তার অবস্থা খুব ভালো মনে হচ্ছিল না। বাংলাদেশ সরকার তাকে শিগগিরই ছেড়ে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

লন্ডনে হাসনাত করিমের একজন আইনজীবী রডনি ডিক্সন বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত হয় হাসনাত করিমকে ছেড়ে দেয়া, নয়তো তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা। তিনি আরও বলেন, হাসনাত করিমকে তার আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে এবং তার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগের সুযোগ দিতে হবে।

রডনি ডিক্সন জানান, জাতিসংঘের ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রেটরি ডিটেনশন’ যাতে হাসনাত করিমের অবস্থা দেখতে পারে, সেজন্যে তারা ইতোমধ্যে চিঠি লিখেছেন।

রডনি ডিক্সন বলেন, গুলশানে যে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার অবশ্যই তা তদন্ত করবে। কিন্তু যেহেতু হাসনাত করিমের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাই এখন তাকে মুক্তি দেয়া উচিত।

উল্লেখ্য, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় হামলার পর একজন কোরিয়ান নাগরিকের গোপনে ধারণ করা ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর হাসনাত করিমের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে। ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম পুরো পরিবার নিয়ে হামলার দিন এ রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন তাঁর কন্যার জন্মদিন উদযাপন করতে বলে দাবি করে তার পরিবার।

তবে গুলশান সংকট চলাকালে তাকে জঙ্গিদের কয়েকজনের সঙ্গে হাঁটতে, কথা বলতে এবং সিগারেট খেতে দেখা যায়। হাসনাত করিম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালে হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বলেও অভিযোগ ওঠেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত