রাবি প্রতিনিধি

২১ অক্টোবর, ২০১৬ ২২:১২

নিহত রাবি শিক্ষার্থী লিপুকে ‘হুমকি’ দেওয়া হতো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপুকে হুমকি দেওয়া হয়েছিলো বলে অভিযোগ করেছেন তার চাচা মো. বশির।

তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগে বাড়ি থেকে একশ গজ দূরে বাগানে ফোনে কথা বলছিলো লিপু। ওই সময় ফোনে বলতে শোনা যায়, ‘আমি ক্যাম্পাসে আসছি তুই যা পারিস করিস।” এ কথা লিপুর দাদি ও রোস্তম নামে পরিবারের একজন শুনেছেন বলেও দাবি করেন মো. বশির।

বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় নবাব আব্দুল লতিফ হলের ডাইনিয়ের পাশের নর্দমা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই মো. বশির রাজশাহী নগরীর মতিহার থানায় একটি হত্যা মামলাও করেন।

এ বিষয়ে মো. বশির আরো বলেন, ‘লিপুর সব ঘটনা তো আর জানতাম না। তবে কিছু দিন আগে সে আমাকে বলেছিলো, লিপু যে নিয়োগ পরীক্ষার জালিয়াতি (প্রক্সি) করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলো, ওই চক্রের কে বা কারা তাকে নিয়মিত ফোন করতো। তাকে ফোনে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকি দিতো। এই বিষয়টা নিয়ে লিপু খুব টেনশন করতো। সে আমাকে এরকম একটা ঘটনা বলেছিলো।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লিপুর এক সহপাঠী বলেন, ‘গত বছরের মাঝামাঝি অন্যজনের হয়ে পরীক্ষা (প্রক্সি) দিতে গিয়ে ধরা পড়েছিলো লিপু। সেজন্য জন্য তাকে জেলও খাটতে হয়েছিলো তাকে। পরে ও আমাকে বলেছে, এসব আর সে কখনো করবে না। কিন্তু সমস্যাটা হলো লিপু ওই জালিয়াতি চক্রকে চিনে ফেলেছিলো। এজন্য তাকে মাঝেমাঝেই হুমকি দেওয়া হতো। তবে এ বিষয়ে ওর আইনজীবী আরো ভালো বলতে পারবে। মামলার স্বার্থে আইনজীবীকে সে অনেক কিছুই বলে থাকতে পারে।’

ওই সহপাঠী আরো বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবারও একটা চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা ছিলো রাজশাহীতে। সেজন্য হলগুলোতে অনেকেই ছিলো। ও মঙ্গলবার এসেছে ক্যাম্পাসে। ওই জালিয়াতি চক্র তাকে আবার জোর করে থাকতে পারে। সে এতে রাজি না হলেও তাকে মেরে ফেলতে পারে।’

লিপুকে হত্যা করা হয়েছে, এমন আশঙ্কা থেকে মামাতো ভাই মো. সজীবউদ্দিন বলেন, ‘লিপু একটু সহজ-সরল ছিলো, ভয়ও পেতো। এজন্য ওর মাজায় একটা মাদুলি বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো। ওই মাদুলিটা ওর ঘরের মেঝেতে ছেড়া অবস্থায় পড়েছিলো। লিপুর রুমের বাইরে অতিরিক্ত দুই জোড়া জুতা পাওয়া গেছে। যেগুলো ওই রুমের কারো না। আর লিপুর পায়ের একটি জুতা ওর ঘরে পাওয়া গেছে, আরেকটি যেখানে ওর লাশ পাওয়া গেছে সেখানে পাওয়া গেছে।’

সজীবউদ্দিন আরো বলেন, ‘ওর লাশ যেখানে পাওয়া গেছে ওই জায়গাটা আমরা দেখেছি। লাশের পাশেই একটা পেঁপে গাছ আছে। যদি সে উপর থেকে পড়ে যেত তাহলে সেখানে কিছু পেঁপে গাছটার ছেড়া পাতা পাওয়া যেত। কিংবা অন্য কোনো উপসর্গ পাওয়া যেত। কিন্তু এসবের কিছুই পাওয়া যায়নি। আমার বিশ্বাস, ওর মাথায় হাতুড়ি কিংবা শক্ত কিছু দিয়ে মেরে, পরে সেখানে নিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে।’

‘এটা কখনোই আত্মহত্যা না, পরিকল্পিত একটা হত্যাকাণ্ড। একটা ছেলে হলের ভেতর মারা যাচ্ছে, হল কিংবা রুমের কেউ জানে না এটা হতে পারে না।’ বলেও জানান সজীবউদ্দিন।

নিজের সন্তানকে যে হত্যা করা হয়েছে সে যুক্তি তুলে ধরতে হলো আর্তনাদ করতে করতে লিপুর মা মোছা. হোসনে আরা বলেন, ‘রাজশাহী যাওয়ার আগে ও বলল, ফরম ফিলাপ করতে হবে টাকা লাগবে। আমি ওকে চার হাজার টাকা দিলাম। টাকা না দিতে পারলে তো ও রাগারাগি করতো, মন খারাপ করতো। কিন্তু আমার মনি তো ভালোভাবেই গেল। ওর চাচা ওকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আসলো। পরে শুনেছি, ও ফরম ফিলাপও করছে। আমার মনি আত্মহত্যা করে নাই, ওরে মেরে ফেলা হইছে।’

মা হোসনে আরা আরো বলেন, ‘ওর নরমাল একটা ফোন ছিল। সেটা ও রাগ করে ভেঙে ফেলে। সেজন্য ও ওর রুমমেটের ফোনে সিম তুলে কথা বলতো। গত মঙ্গলবার রাত ৮টায় আমার মনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে, রুম-টুম পরিষ্কার করে আমার সাথে কথা বলে। পরের দিন সকালে ক্লাসে যাওয়ার আগে আমায় বলল, ‘লিয়ন কই? আমি বলছি, লিয়ন আমার পাশে আছে। ও বললো, লিয়নকে স্কুলে পাঠাও। আমি বললাম ও যেতে চায় না। ও তখন বলল, বল আমি আসতেছি তাহলে ও ভয়ে স্কুলে যাবে। পরে রেখে দেওয়ার সময় ও বলল, এই নাম্বার তুমি রেখো না পরে আমি তোমারে আরেকটা নতুন নাম্বার দিব। এই বলে ও ক্লাসে যায়। এরপর আর হয়নি।’

‘আমার মনিরে অতিরিক্ত চাপা মাইর দিয়েছে। মাথায় মাইরেছে। মাথায় মাইরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমার মনিরে কীভাবে আঘাত কইরে মাইরেছে। আমার মনিরে খুব আঘাত কইরেছে। আমার মনিরে আমি কোনো দিন একটা থাপ্পড়ও দেই নাই। আর আমার এই দেখতি হল। আমি আমার মনিরে যারা মারছে, আমি তাদের বিচার চাই। আর কিছুই চাই না।’ বিলাপ করতে করতে মা হোসনে আরা এভাবেই সন্তান হত্যার বিচার চান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত