সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ জানুয়ারি, ২০১৭ ২০:০৯

দেশের অর্থনীতি শক্তভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অর্থনীতি শক্তভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ৩.৫ বিলিয়ন ডলার যা বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন ডলারেরও উপর । বিগত আট বছরে দেশ-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। গত বছর রেকর্ড ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে।'

বক্তব্যের শুরুতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে গঠিত তার সরকারের তিন বছর পূর্তিতে দেশের সব গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আজ ১২ই জানুয়ারি। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে আজকের দিনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি তৃতীয়বারের মত শপথ গ্রহণ করি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তৃতীয় বছর পূর্তিতে দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার টানা ৮ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে ৯ম বছরে পদার্পন করতে যাচ্ছে। আপনারা এই দীর্ঘ সময় ধরে আমাকে এবং আমার সরকারকে আপনাদের সেবায় নিয়োজত থাকার সুযোগ দিয়েছেন। এ জন্য আমি আপনাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।'

তিনি বলেন, 'আপনাদের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি- সে বিচারের ভার আপনাদের উপরই রইল। তবে আমি এটুকু দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, দেশের এবং দেশের মানুষের উন্নয়ন এবং কল্যাণের জন্য আমরা আমাদের চেষ্টার ত্রুটি করিনি। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিপুল জনসংখ্যার এদেশে সম্পদের পরিমাণ সীমিত। দীর্ঘকাল দেশে কোন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়নি। বহু সমস্যা পুঞ্জিভূত হয়ে পাহাড়-সমান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মোকাবিলা করতে হয়েছে অভ্যন্তরীণ বিরুদ্ধ পরিবেশ। বৈশ্বিক বৈরি অর্থনৈতিক অবস্থাও উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বার বার। কিন্তু সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের সর্বজনীন মডেল। দ্রুত সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বব্যাংক মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী উপস্থাপন করছে। আট বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ।'

১২ জানুয়ারি সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে এই ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার একযোগে তার এই ভাষণ প্রচার করা হচ্ছে। কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলও প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ সম্প্রচার করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯-১৪ সালের প্রথম মেয়াদসহ দ্বিতীয় মেয়াদের তিন বছরে দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণে তার সরকারের উন্নয়নকাজের বিবরণ তুলে ধরেন।

সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি আজ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকারও বেশি। যা জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৪তম এবং ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩২তম। ধারাবাহিকভাবে ৬.৫ শতাংশ হারে প্রবৃৃদ্ধি ধরে রেখে পুরো বিশ্বকে আমরা তাক লাগিয়ে দিয়েছি। জনগণের মাথাপিছু আয় ২০০৫-০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে আজ ১ হাজার ৪৬৬ ডলার হয়েছে।'

মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকায় মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। ২০০৯ সালে মূল্যস্ফীতি ছিল ডাবল ডিজিটে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৫.০৩ শতাংশ।'


তিনি বলেন, '২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই, তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ১৫ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চাই। সেই লক্ষ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। কয়েকটি বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু করেছি।'

শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অমাদের সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১০ সালে আমরা মাধ্যমিক পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ কর্মসূচি শুরু করি। এ বছর ৪ কোটি ২৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯২৯ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই বিতরণ করা হয়েছে।'

যোগাযোগ খাতে উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ৪৮টি বৃহৎ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।'

আপনার মন্তব্য

আলোচিত